Monday, July 1, 2013

- ২০. প্রেম ও না-প্রেম: খ।। মডেল স্কুল ও একটা না-প্রেমের কাহিনী ও গ।। মডেল স্কুল ও একটা হ্যাঁ-প্রেমের কাহিনী

 

খ।। মডেল স্কুল ও একটা না-প্রেমের কাহিনী

 

তখন মডেল স্কুলে ক্লাস নাইন থেকে ছেলে মেয়ে এক সাথে আমাদের কিছু ছেলের বিকেলে কলেজ থেকে এসে বারান্দায় দাড়িয়ে মন চলে যেত স্কুলফেরত বালিকাদের দিকে কিছু সম্পর্ক গড়ে উঠলেও, অনেকগুলো গড়ে উঠবে উঠবে করেও করেনি এইরকম এক সম্পর্ক গড়ে না উঠার কাহিনী

 

তখন আমরা হোস্টেল দশে থাকি দুই বন্ধু, নাম ধরে নেওয়া যাক অমল আর বিমল অমলের মডেল স্কুলের একটি মেয়েকে ভারী পছন্দ কিন্তূ বলবে কিভাবে? সোজা রাস্তা, যদি মেয়েটিকে কোনোভাবে ইমপ্রেস করা যায় বিমল অমলের প্রানের বন্ধু, বন্ধুর সাথে ঠিক করলো একদিন স্কুল ছুটির সময় বিমল উল্টোদিক থেকে এসে মেয়েটিকে ইচ্ছে করে একটু ধাক্কা মারবে প্লান অনুসারে অমল স্কুলের দিক থেকে এসে বিমলের জামার কলার ধরে দু-এক ঘা বসিয়ে দেবে প্রত্যাশিত সেই মেয়েটি অমলকে এসে ধন্যবাদ জানাবে এবং সেই সুযোগে প্রেমকাহিনী শুরু হবে সব ঠিক, প্লান অনুসারে অমল আর বিমল শেষ ক্লাসটা মায়া করে (মানে কেটে পড়ে) হোস্টেল চলে এলো

 

স্কুল ছুটির সময় হয়েছে দুজনে প্ল্যান অনুসারে সেই রাস্তায় নিজের নিজের জায়গায় চলে গিয়েছিল অমল খুব উত্তেজিত, স্কুল ছুটি হয়েছে, সবাই বেরিয়ে আসছে ওই তো সেই মেয়েটি অমল দেখল উল্টোদিক থেকে দ্রুত হেঁটে আসছে বন্ধু বিমল চরম উত্তেজনা, কিন্তু সেই উত্তেজনার বশেই ঘটে গেল দুর্ঘটনা

 

অমল উত্তেজনার বশে ঠিক জায়গায় চলে এলেও, সময়ের একটু ভুল করে ফেলল বিমল এসে ধাক্কা মারার আগেই হঠাৎ দৌড়ে এসে বিমলের উপর ঝাপিয়ে পড়ল শুরু হলো কিল-চড়, যেগুলো উত্তেজনার বশে একটু জোরালোই হয়ে গিয়েছিলো হঠাৎ কলেজের দুই ছাত্রের রাস্তায় মারামারি দেখে আশেপাশে লোকজন জড়ো হতে সময় লাগেনি মেয়েটি তার বন্ধুরাও ঘাবড়ে গিয়ে দাড়িয়ে পড়ে আশেপাশে জড়ো হওয়া লোকজন জানতে চাইলে অমল হাঁফাতে হাঁফাতে বলে, "দেখুন না, এই ছেলেটি খুব অসভ্য মেয়েদের  সন্মান দিতে জানে না এইতো জিজ্ঞেস করুন না এদের এসে ইচ্ছে করে ধাক্কা মারলো"

 

মেয়েদের দল অবাক, "কোই এমন তো কিছু হয় নি! আমাদের সামনে আসতেই হঠাৎ এই দুজন এসে মারামারি শুরু করলো নিজেদের মধ্যে"

 

বিমল তখন অমলকে প্রানপনে বোঝাতে চাইছে "অমল সময়ের ভুলে সব গণ্ডগোল হয়ে গেছে" বুঝতে পেরে অমলেরও তখন ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি অবস্থা জড়ো হওয়া লোকজনের বুঝতে অসুবিধে হলো না যে দুজনের কিছু বদ মতলব ছিল তারপর সবাই মিলে অমল আর বিমলকে বেশ কয়েক ঘা দিয়ে ছেড়েছিল তারসাথে জোটে মেয়েদের বক্রোক্তি দুজনে জামা কাপড় ছিড়ে, মরমে মরে হোস্টেল- ফিরে এসেছিল আমরা কলেজ থেকে ফিরে এসে অনেক পরে দুজনকে দেখতে পাই পাঁচতলার ছাদে জলের ট্যাঙ্কের উপর

 

দুজনে গাঁজার কল্কেতে টান দিতে দিতে আকাশের তারা গুনছিল হয়তো খুঁজছিল কোনো চিত্রা, অরুন্ধতী, রোহিণী বা স্বাতীকে।

 

 

।। মডেল স্কুল ও একটা হ্যাঁ-প্রেমের কাহিনী

 

ঘটনাটি আমাদের আসার অনেক আগেই হয়েছিল যার জীবনে তিনি কলেজের তখন (এখনও) এক প্রফেসর। তাই নাম না বলাই ভালো। মুচিপাড়া থেকে কলেজ আসতে গেলে ওভাল আর উল্ফেনডেন হলের মাঝে একটা ভগ্নপ্রায় বাড়ি ছিল যেটা এখন আর নেই। ওটা ছিলো বিশপ কলেজের আমল থেকে অনেকদিন চালু থাকা পূর্তবিভাগের কেমিকাল ল্যাবরেটরি।

 

এই কাহিনীর নায়ক তখন বি কলেজের ছাত্র, মুচিপাড়ার এক হোস্টেলে থাকে আর নায়িকা তখন মডেল স্কুলের ছাত্রী অনেকদিন ইস্কুল ছুটির সময় নায়ক খালি হাতে, নোটবুক হাতে বা কোনো ফুল হাতে দাড়িয়ে থাকত, সুযোগ খুঁজত কবে সেই দিন আসবে যখন সেই ফুল নায়িকার হাতে দিয়ে বলবে "প্রিয়ে, তুমি আমার ভাঙ্গা দাওয়ায় স্বর্ণচাঁপা রাজেন্দ্রাণী" বা গাইবে "এই তো হেথায় কুঞ্জ ছায়ায় স্বপ্ন মধুর মোহে" নায়িকাটির মনে কি হতো জানা না গেলেও যাবার পথে একটু হাসি উপহার দিত বা বান্ধবীদের নজর এড়িয়ে একটু পিছন ফিরে তাকাতো নায়কের দিকে, যেটাকে কলেজের ভাষায় বলা হত "ঝাড়ি মারা"

 

একদিন এক বর্ষার দিনে নায়ক দাড়িয়ে আছে; নায়িকার স্কুল ছুটি হয়েছে; সবার এক ড্রেস আর মাথায় ছাতা; নায়ক "ঘেঁটে গেছে" (মানে confused); বুঝতে পারছে না কে সেই নায়িকা আর কে তার কোনো বান্ধবী; বিচলিত হয়ে শ্যাওলা ধরা সিড়িতে উপড় নিচে করতে গিয়ে পা পিছলে দড়াম; বেশ ভালো চোট পেয়েছিল আর তার সাথে হাত ভেঙ্গে আমাদের সেই বিখ্যাত হসপিটালে ভর্তি হতে হয়। নায়িকা হয়ত সেদিন স্কুলেই আসেনি বা এলেও এসব দেখেও স্লো মোশনে দৌড়ে আসেনি আর পিছনে একশটা ভায়োলিনও বাজে নি। বন্ধুরাই নায়ককে ডাক্তারের কাছে নিয়ে গিয়ে, হাতে প্লাস্টার করিয়ে হসপিটালে ভর্তি করে এসেছিল। আর উপদেশ দিয়েছিল এরপর থেকে আলুর দোষটা ত্যাগ করার। নায়কও ভগ্নমনে তাই মেনে নিয়েছিল।

 

এই কাহিনীর এখানেই শেষ হত বা হওয়া উচিত ছিল। কিন্তূ কহানী মে টুইস্ট থা। তিন-চার দিন পরে সেই নায়িকা এক সিঁদুররাঙ্গা মেঘের পড়ন্ত বিকেলে টিউশন পড়তে যাওয়ার ফাঁকে একগোছা ফুল নিয়ে দেখা করতে এসেছিল। তারপর লাভার্স লেনে শরতের কাশফুল, শীতের দুপুরে বি গার্ডেনের গঙ্গার পাড়, ফুল না ফোটা বসন্তে বক্সিং রিং পেরিয়ে সেই নায়িকা আজ সেই নায়কের ঘরণী।

No comments:

Post a Comment

Note: Only a member of this blog may post a comment.