চ।। অমিতাভের মেয়ে দেখতে যাওয়া (ঝাড়ি মারা)
সত্তরের দশকে শ্যামল দত্তরায় বি ই কলেজের হোস্টেলে থাকার অভিজ্ঞতা নিয়ে একটা মজার বই লিখেছিলেন। বইটার নাম ছিলো "ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে অমিতাভ"। প্রকাশ হবার পর বইটি বেশ জনপ্রিয় হয় এবং অমিতাভ চৌধুরী আনন্দবাজারে রিভিউ করে বেশ প্রশংসা করেন। সেই বইতে অনেক মজার ঘটনা আর চরিত্র ছিল। আসল বইটি অনেক খোঁজ করেও পাওয়া যায়নি। কিন্তূ পরে শ্যামল দত্তরায়ের স্কুলের বন্ধু (সেন্ট লরেন্স, কলকাতা) এবং কিছু গুনগ্রাহী পাঠকের দৌলতে কিছু কিছু অংশ উদ্ধার করা গেছে। আমি এই ব্যাপারে কৃতজ্ঞ শ্রী সন্তোষ কুমার সিনহা ও শ্রী ইন্দ্রজিৎ ভৌমিকের কাছে। এখানে এই বইটি থেকে একটি প্রেম জাতীয় গল্প।
বি ই কলেজের ছেলেরা বিকেলে প্রায় ই ক্লাস কেটে হাওড়া গার্লস স্কুলের গেটের সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। সেখানে তখন স্কুল ছুটি হলে মেয়েরা বেরিয়ে আসে, তাদের মধ্যে কারুর কারুর সাথে আলাপ হয়েছে তাদের, কিংবা আলাপ না হলেও তাদের মধ্যে বিশেষ কাউকে একটু চোখের দেখা দেখবার জন্যেও তাদের ভীড় জমে যায়। তারপর পাশেই বঙ্গবাসী সিনেমা হলে গিয়ে ইভনিং শোয় একটা ছবি দেখে হোস্টেলে ফেরা।
আমাদের অমিতাভ একদিন একটু আগেই পৌঁছে গেছে। হাতে একটু সময় থাকায় চুল কাটার জন্যে সে পাশেই একটা সেলুনে ঢুকে পড়ল। বিকেল বেলা সেলুন ফাঁকা, কোন খদ্দের নেই। অমিতাভ ঢুকে দেখে বেশ বলশালী গোছের এক যুবক, চাপদাড়ি, মাথায় বাবরী চুল, মা দুর্গার অসুর হিসেবে একে খুব মানাবে। এ এখানে কি করছে?
যুবক টি দেখতে যেমন ই হোক, তার ব্যবহার অতি ভদ্র ও বিনীত। সে তাকে "আসুন স্যার, বসুন স্যার" বলে খুব আপ্যায়ন করে একটা চেয়ারে বসিয়ে দিল। জানা গেল যে সে দোকানের মালিকের বন্ধু, সম্প্রতি একটা খুনের মামলায় ধরা পড়ে পুলিশের হেফাজতে ছিল, আজই জামিনে ছাড়া পেয়ে বন্ধুর দোকানে কাজে লেগে গেছে। এমনিতে চুল কাটা তার পেশা নয় ঠিকই, কিন্তু ছুরি কাঁচি চালানো তার কাছে কোন ব্যাপারই নয়, বস্তুতঃ চাকু আর ক্ষুর চালানোতে তার অভিজ্ঞতা বিস্তর।
দুর্গা নাম জপ করতে করতে প্রাণ হাতে করে অমিতাভ চেয়ারে বসে রইল। লোকটা আনাড়ী হাতে খাবছা খাবছা করে তার চুল কেটে যাচ্ছে আর মাঝে মাঝে কাজ থামিয়ে ক্ষুর টা হাতে নিয়ে খেলাচ্ছলে নাড়াতে নাড়াতে সমানে গল্প করে যাচ্ছে, তার কীর্তিকলাপের কথা, কবে কার পেটে চাকু মেরেছে, কার গলায় ক্ষুর, এইসব। চুল কাটা শেষ হলে "একটু ম্যাসাজ করে দিই স্যার?" বলে সে পাঁচ মিনিট ধরে হাতের সুখ করে অমিতাভর ঘাড়ে রদ্দা মেরে গেল। কোন মতে পয়সা দিয়ে অমিতাভ যখন সেলুন থেকে বেরলো তখন সে চোখে সর্ষেফুল দেখছে, তার মাথা ঝিমঝিম, চোখের নীচে কালি, মাথার চুল খোঁচা খোঁচা, রদ্দা খেয়ে ঘাড় বেঁকে গেছে।
এই অবস্থায় আর হাওড়া গার্লস স্কুলে যাওয়া যায়না, টলমলে পায়ে উল্টো দিকের রাস্তা দিয়ে একটু এগোতেই অমিতাভ দেখল সামনে এক মহিলা হেঁটে আসছেন আর তাঁর সাথে একটি বাচ্চা ছেলে, সে তারস্বরে চেঁচিয়ে কেঁদে যাচ্ছে। অমিতাভ শুনলো মা ছেলে কে বল্লেন, "ওই দ্যাখো ভূত! আর একবার কাঁদলেই তোমায় ভূত এসে ধরে নিয়ে যাবে"।
ব্যাস, যেই না বলা, বাচ্চা টা একবার অমিতাভর দিকে তাকিয়ে সঙ্গে সঙ্গে একদম চুপ।
No comments:
Post a Comment
Note: Only a member of this blog may post a comment.