Thursday, July 4, 2013

- ২০. প্রেম ও না-প্রেম: ঘ।। চলচিত্রের নায়িকারা

।। চলচিত্রের নায়িকারা

এটাও হয়তো ছেলেমানুষী বা উঠতি বয়সের স্বভাব বলা যেতে পারে রিয়েললাইফের স্বপ্নে রিললাইফের নায়িকার সাথে পথ চলা বা সিনেমাজগতের সাথে বাস্তবজীবনের এক দুর্বোধ্য জগাখিচুড়ি। অথবা বাস্তবে কোনো পাগলী খুঁজে না পেয়ে, চলচিত্রের নায়িকাদের জন্যে পাগল হয়ে ওঠা। ১৯৯৩ থেকে ১৯৯৭ সময়টায় কোনো উল্লেখযোগ্য বাঙলা সিনেমা মুক্তি পায়নি। উল্ল্যেখ করার মতো বাংলা সিনেমা বলতে ঋতুপর্ণ ঘোষের দ্বিতীয় পরিচালনা 'উনিশে এপ্রিল' - অপর্ণা সেন, প্রসেনজিৎ দেবশ্রীকে নিয়ে টানটান পারিবারিক টানাপোড়েনের গল্প আর অপর্ণা সেনের যুগান্ত - অঞ্জন দত্ত রুপা গাঙ্গুলীকে নিয়ে আলাদা থাকা এক দম্পতির পুনর্মিলনের কাহিনী। তাই আমাদের কাছে বিনোদনের বস্তু ছিলো মূলতঃ হিন্দী আর কিছু ইংরেজি সিনেমা। শাহরুখ খান তখন প্রথমদিকের খলনায়কের ভুমিকা ছেড়ে একের পর এক হিট সিনেমা উপহার দিচ্ছেন। কম যায় না সলমান খান, সঞ্জয় দত্ত, জ্যাকি শ্রফ, অক্ষয় কুমার, গোভিন্দা, আমির খান, নানা পাটেকার, অনিল কাপুর ইত্যাদি।

 

এই চার বছরের হিট সিনেমাগুলোর মধ্যে কয়েকটা হলো: আঁখে, খলনায়ক, ডর, বাজিগর, তিরাঙ্গা, দামিনী, গুমরাহ, আনাড়ি, গর্দিশ, আয়না, হামহে রাহী প্যারকে, কভি হাঁ কভি না, খুদা গাওহা, কিং আঙ্কেল, মায়া মেমসাব, রুদালী, স্যার, রূপকি রানী চোরোকা রাজা, হাম আপকে হ্যায় কৌন, রাজাবাবু, মহরা, ক্রান্তিভীর, সুহাগ, ম্যাঁ খিলাড়ি তু আনাড়ি, ভিজায়্পাথ, লাডলা, ১৯৪২ লাভ স্টোরি, আগ, আন্দাজ আপনা আপনা, আঞ্জাম, ব্যান্ডিট কুইন, দিলবালে, দ্রোহকাল, দুলারা, ইনা মিনা ডিকা, এলান, ইয়ে দিল্লাগি, জালিম, দিলবালে দুলহানিয়া লে জায়েঙ্গে, করণ অর্জুন, কুলি নং , রাজা, রঙ্গিলা, বরসাত, সবসে বড়া খিলাড়ি, রামজানে, বম্বে, ত্রিমূর্তি, আকেলে হাম অকেলে তুম, গুড্ডু, টক্কর, রাজা হিন্দুস্থানী, জিত, ঘাতক, অগ্নিসাক্ষী, সজন চলে শ্বশুরাল, খিলাড়িয়ো কা খিলাড়ি, দিলজ্বলে, হিন্দুস্থানী, চাহাত, দস্তক, বন্দিশ, বর্ডার, দিল তো পাগল হ্যায়, পরদেশ, ইসক, জীদ্দী, হিরো নং , জুরওয়া, গুপ্ত, ইয়েস বস, জুদাই এবং আরও কিছু।

 

এইসময় আমাদের মধ্যে খুদাগাওহা ঘিরে একটা উত্তেজনা ছিলো কারন সেটাই ছিলো বচ্চনসাহেবের শেষ সিনেমা। প্রায় সবাই সেটা দেখতে গিয়েছিলো। যদিও আমরা জানি ১৯৯৬ নাগাদ উনি ABCL খোলেন এবং প্রচুর লোকসান করে পাঁচ বছরের অবসর ভেঙ্গে ফিরে আসেন আমাদের কলেজ জীবনের শেষদিকে, ১৯৯৭- মুক্তি পাওয়া মৃত্যুদাতা সিনেমায়। college ese আমার দেখা প্রথম সিনেমা ১৯৯২- মুক্তি পাওয়া 'রোজা' সারাজীবন মনে থাকবে দৌড়াতে দৌড়াতে গিয়ে লিপিতে ঢুকছি আর হালকা নীল রঙের নৈসর্গিক দৃশ্যের প্রেক্ষাপটে সেই হিট গান 'দিল হি ছোটা সা' এখনকার মতো তখনও আমির খান বছরে একটা করেই সিনেমা করলেও ১৯৯৫ সালে পরপর মুক্তি পেয়েছিলো আমির খানের চারটে সিনেমা, আতঙ্ক হি আতঙ্ক (জুহি),  রঙ্গিলা (উর্মিলা), আকেলে হাম অকেলে তুম (মনীষা) আর বাজি (মমতা কুলকার্নি)

 

কিন্তূ স্বাভাবিক কারনেই আমাদের আকর্ষণ থাকতো নায়িকাদের প্রতি। কলেজে আসার আগেই আমরা অনেকেই তখন মাধুরীর প্রেমে হাবুডুবু। খলনায়ক, আঞ্জাম, ডর, হাম আপকে হ্যায় কৌন সেই প্রেমকে আরো বাড়িয়ে তুললো। কাজলকে বাজিগরে দেখে ভালোলাগা ভালবাসায় বদলে দিলো দিলবালে দুলহানিয়া লে জায়েঙ্গে। সবাই তখন শাহরুখ খান, সপ্তাহান্তে বাড়ি যাতায়াতের পথে ট্রেনের দরজায় দাড়িয়ে উঁকি মেরে দেখে কোথাও কোনো কাজল ছুটতে ছুটতে আসছে কিনা। কারিশ্মাকে গোভিন্দার সাথে রাজাবাবু, কুলি নং , সজন চলে শ্বশুরাল এইসব সিনেমায় দেখে যারা একটু টাইমপাস গোছের মনে করেছিলাম, তারাও ভালোবেসে ফেল্লাম রাজা হিন্দুস্থানীতে বালতি বালতি চোখের জল ফেলতে দেখে। সবকালে সবদেশে অনেক মেয়েই তো চোখের জলেই জিতে নিয়েছে তার কাঙ্খিত পুরুষটির হৃদয়। আমরা আগামী দিনের কারিগর, তাই অনেকেই কারিশ্মার কাঙ্খিত পুরুষ হবার যোগ্যতা রাখি। ১৯৪২ লাভ স্টোরি আর অগ্নিসাক্ষী দেখে পাহাড়ি সুন্দরী মনীষা কৈরালার স্বপ্নের সওদাগর হতে কার না মন চাইবে। তারপর যখন তিন মিটার কাপড়ের আড়াই মিটারই মনীষা মাথায় জড়িয়ে খোলাখুলি ডাক দিলো ' ইয়ারা দিল লাগানা' আর শোনা গেলো তিনি ঘনঘন বয়ফ্রেন্ড বদল করেন তখন উৎসাহটা একটু বেশী হওয়াই কি স্বাভাবিক নয়। জুহি কে বেশ মিষ্টি সুন্দরী বলে মানাতো ইয়েস বস বা হামহে রাহী প্যারকের মতো সিনেমাতেই। ডরে জুহির ভয় পাওয়ার অভিব্যাক্তি দেখে দর্শকের মনে হয় হাসিই পেয়েছে বেশী। যাইহোক ভারতসুন্দরী এই মিষ্টি নায়িকার প্রেমিকের সংখ্যা খুব একটা কম ছিলো না কলেজে আমার এক বন্ধু বলতো শরীর ছাড়া প্রেম হয়না আর প্লেটনিক লাভ হলো অবাস্তব, পাগলের প্রলাপ। কারণ যাই হোক না কেন ক্ষনপ্রভা 'ভোলি ভালি লেড়কি' মমতা কুলকার্নির পোস্টার আর ১৯৯৩- এক স্টারডাস্টের প্রচ্ছদে ছাপা সেই বিতর্কিত ছবি হোস্টেলের অনেক ঘরের দেওয়ালেই শোভা পেত। হৃদয়ে ঢেউ তুলে হাজির হলো উর্মিলা মাতন্দকার। আহাঃ কি ফিগার, কি আপীল, কিছু কনফার্মড ব্যাচেলারের দল হুঙ্কার দিলো 'গার্লফ্রেন্ড হো তো উর্মিলা য্যায়সা' তাই তো এতদিন কাউকে মনে ধরেনি।

 

এছাড়াও ছিলো যো জিতা ওহি সিকান্দার- আয়েষা ঝুলকা আর সেই নৈসর্গিক দৃশ্যের মধ্যে "পহেলা নাশা, পহেলা খুমার, নয়া প্যার হ্যাঁয়, নয়া ইন্তেজার" এই রকম কয়েকটা মিষ্টি নায়িকাকে প্রথম দর্শনেই অনেকে মন দিয়ে ফেলেছিলাম, যেমন আমাদের কলেজে আসার অনেক আগেই মুক্তি পাওয়া 'ম্যায়নে প্যার কিয়া'তে ভাগ্যশ্রী বা আমাদের কলেজ জীবনের ঠিক পরেই মুক্তি পাওয়া 'করীব'- নেহা। আমরা অনেকেরই স্কুলজীবনে সিনেমা দেখার স্বাধীনতা ছিলো না বলে কলেজে এসে দেখেছিলাম 'ম্যায়নে প্যার কিয়া', যেটা নাকি কেউ কেউ আলোকা বা লিপিতে গিয়ে ১৫ থেকে ২০ বার দেখেছে। আমি নিজে দিলবালে 'দুলহানিয়া লে জায়েঙ্গে' বার দশেক দেখেছি আলোকা, হিন্দ আর লিপিতে।

 

আরো অনেকে ছিলো, হোস্টেলের দেওয়ালে বা দরজায় সাঁটা। বাড়ির লোকজন চলে আসার আশঙ্কা থাকলে এইসব নায়িকারা উঁকি মারতো লকারের ভিতরে, বিছানার নিচে বা বইয়ের মধ্যে থেকে। উপরে যেগুলো বললাম অনেকগুলোই আমার রুমমেট বা ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের ব্যাপারে। আমার লকারের মধ্যে থেকে উঁকি মারত দিভ্যা ভারতী। আমার সাথেই চার বছর চার হোস্টেলে ঘুরেছিলো আর কলেজ ছাড়ার পরেও অনান্য মালপত্রের সাথে আমার বর্ধমানের বাড়িতে এসে উঠেছিলো। এখনো হয়তো খোঁজ করলে পাওয়া যাবে পুরোনো বইখাতার ফাঁকে

No comments:

Post a Comment

Note: Only a member of this blog may post a comment.