Thursday, November 21, 2013

চা-এর নাম চা কেন?

সেদিন এক বুদ্ধিজীবী কলেজ পড়ুয়ার সাথে দেখা। চে গেভেরার ছবি টিশার্টে। সদ্য 'শূন্য অঙ্ক' সিনেমাটা দেখেছি।
 
জানতে চাইলাম, এটা কার ছবি?
 
বলল - 'কুল ডুড, দিস ইস ছে। ছে গাভেরা'।
 
বললাম, তাই, উনি কোথাকার?
 
বলল, 'আই থিঙ্ক চায়না অর লাতিন অ্যামেরিকা'।
 
আমি বললাম উনি কিভাবে মারা গেছেন জানো?
 
হাসতে হাসতে বলল, 'হে হি ইজ অ্যালাইভ। লেনিন, মাও আর পাস্ট, বাট ছে ইজ ভেরি মাচ প্রেজেন্ট। হি ইজ হট।'
 
এতো তাড়াতাড়ি চে কুল থেকে হট হয়ে গেল দেখে, জানতে চাইনি সুনীলবাবুর লেখা পড়েছিল কিনা বা বলিভিয়ার জঙ্গলের কাহিনী জানে কিনা। ঐ বয়সে আমি জানতাম।
 
তাই এই নিয়ে লিখলাম, একটা রম্যরচনা। বিপ্লবী নামগুলোর পিণ্ডি চটকে।
 
 
+++++++++++++++++++++++
চা-এর নাম চা কেন?
+++++++++++++++++++++++
 
(এখানে সব চরিত্র কাল্পনিক। কোন জীবিত বা মৃত ব্যক্তির সাথে কোনরূপ সাদৃশ্য একান্ত অনভিপ্রেত। কারো ভাবাবেগে আঘাত লাগলে আমি ক্ষমাপ্রার্থী।)
 
আচ্ছা 'চা'-এর নাম চা হল কেন? এটার না হয় সন্ধি না খোঁজা যায় বুৎপত্তি।
 
উৎপত্তি কোথায় জানতে চাইলে একজন বলল এটা চে-এর নামে নাম করা হয়েছে। চে গেভারা স্পেন থেকে এসে চিন দেশে কি একটা মতবাদ প্রচার করতে এলেন, তখন এই পানীয়টা খেতেন।
 
আমাদের দেশে তখন পুঁজিবাদের বিরুদ্ধে সাম্যবাদের জোয়ার। সেই জোয়ারে ভেসে এলেন মাও - ওনার কথা শুনে সবাই চুপ। শুধু একটা বেড়াল বললো ম্যাও। সেই থেকে পুঁজিবাদীদের তাড়া খেয়ে সর্বহারা আদিবাসীদের সাথে ম্যাওরা জঙ্গলে জঙ্গলে ঘুরে বেড়ায়।
 
পরের ভরা কোটালে এলেন লেনিন, যে রাস্তা দিয়ে এলেন সেই রাস্তার নাম হয়ে গেল লেনিন 'সরনি'।. মানে লেনিন ট্র্যাফিক জ্যামে আটকে পড়েছিলেন, সবাই পিছন থেকে হর্ন দিলেও একটুও সরে জায়গা দিতে পারেন নি। তাই সবাই ঠোঁট ফুলিয়ে বলেছিল 'লেনিন তুমি সরনি, মনে থাকবে'।. তাই হয়েছে, আমরা মনে রাখবো বলে সেই জায়গার নাম করেছি লেনিন সরণী।
 
আস্তে আস্তে অনেকে এলেন। যেমন হো চি মিন, ভিয়েতনাম থেকে কোলকাতা এখনো ডাইরেক্ট ফ্লাইট নেই বলে, সেই চিন দেশ ঘুরে। এতো লম্বা পথ, তাই আমরা চিন দেশের থেকে পাওয়া একটা লম্বাটে খাবারের নাম রেখে দিলাম ওনার নামে। তাই সেটার নাম হল – চাউমিন।
 
এবারে এলেন চে গেভারা। আমাদের তেলেভাজা খাওয়া জিভের ডগায় পড়ে ওনার নাম হয়ে গেল – চে গুয়েভারা বা চে গু-এ ভরা। এমা ছিঃ কি গন্ধ, মানে দুর্গন্ধ। উনি যে পানীয়টা খেতেন সেটাও কেমন যেন কেমন একটা খড়ধোয়া জলের মতো রং – মানে ঐ যে অনেকক্ষণ জল না খেয়ে টয়লেট গেলে যা উৎপন্ন হয় বা কমোডে অল্প জল ফ্লাশ করলে। তাই আমরা কল্লাম কি, সেই পানীয়র সাথে দুধ চিনি মিশিয়ে দিলাম। বেশ একটা কাদা কাদা রং এলো – মানে রঙের খোলতাই হল।
 
এবার নাম নিয়ে গবেষণা শুরু হল। 'গুয়েভারা' নাম তো আর দেওয়া যায় না - তাই শুধু চে। অনেকে বল্লেন চে বললে সেই গুয়েভারা মনে পড়েই যাবে আর তাছাড়া চে-এর নাম থাকলে পুঁজিবাদীরা পান করবে কি করে! তাই নাম পরিবর্তন করে রাখা হল – চা। সেই থেকে বঙ্গদেশে চা-এর প্রচলন হল।
 
তবে এই লেখা পড়ে যাদের চা খেতে কেমন কেমন লাগবে, তাদের উদ্দেশ্যে বলি, আমি সাধারণতঃ চিনি ও দুধ ছাড়া চা-ই পান করি খড়ধোয়া জলের মতো সোনালী রং। তবে দুধ দেওয়া চিনি ছাড়া, আনমোল মারী সহ বা ছাড়া, সবুজ চা, জুঁই চা, থেকে শুরু করে সব ধরনের চা, এমনকি চিন দেশে চা বাগানে গিয়ে স্বচ্ছ কাঁচের কাপে বাগান থেকে সদ্য তোলা চা-এর পাতা গরম জলে ডুবিয়ে সেবন করেছি। সে এক অদ্ভুত স্বাদ। আর যারা বিরিয়ানি (সেই যেটা বিড়ি আনতে গিয়ে নিচেটা একটু ধরে গিয়ে আবিষ্কার হয়) খেয়ে ঠাণ্ডা পানীয় খান, তাদের বলবো তার বদলে চা পান করুন, খাদ্যনালী পরিষ্কার থাকবে আর স্নেহ পদার্থ আপনার শরীর জমে থেকে আপনার অকাল অসুস্থতা ডেকে আনবে না।  
 
 

No comments:

Post a Comment

Note: Only a member of this blog may post a comment.