- ২২. বার্ষিক ক্রীড়ানুষ্ঠান ও পুনর্মিলন উৎসব
একটু চোখ বুলিয়ে নেওয়া যাক বঙ্গীয় কারিগরী মহাবিদ্যালয়ের বার্ষিক ক্রীড়ানুষ্ঠান ও পুনর্মিলন উৎসবের দিকে - এখন যেটা আমরা রেবেকা (REBECA) নামে চিনি। শুরু করা যাক ১৯০৩ সাল থেকে যখন ছাত্রদের তরফে প্রথম একটা উদ্যোগ নেওয়া হয় "শিবপুর কলেজ পত্রিকা" নামে একটা বাংলা পত্রিকা প্রকাশ করার। ১৯২৮ সাল পর্যন্ত্য বিচ্ছিন্নভাবে এই পত্রিকা প্রকাশিত হয়। ওই বছর থেকে ঠিক হয় নবরূপে একটা বার্ষিক পত্রিকা প্রকাশ করা হবে প্রাক্তন ও বর্তমান ছাত্রদের মিলনমেলার সময়। জন্ম নেয় সিভিল ইঞ্জিনিয়ার্স অ্যানুয়াল (Civil Engineers' Annual - CEA) - যার মান ও বিষয়বস্তুর উতরোত্তর শ্রীবৃদ্ধি ঘটতে থাকে। ছাত্র সংসদের ইতিহাস উল্টাতে গিয়ে আমরা দেখেছিলাম ১৯৩২ সাল থেকে মিঃ ম্যাকডোনাল্ডের উদ্যোগে প্রথম ছাত্র ইউনিয়ন বেক্সির (BECSI – Bengal Engineering College Students' Institute) পথ চলা শুরু। এতদিন পুনর্মিলন হতো শুধুমাত্র সিভিল ডিপার্টমেন্টের ছাত্রদের মধ্যে এবং বার্ষিক পত্রিকারও নাম ছিলো সিভিল ইঞ্জিনিয়ার্স অ্যানুয়াল।
১৯৩৬ সাল পর্যন্ত্য কলেজে স্নাতকের অন্য ডিপার্টমেন্ট বলতে ছিলো শুধু মেকানিকাল আর ইলেকট্রিকাল। ১৯১২ সালে চালু হলেও ১৯৩৬ সালে ইলেকট্রিকালের প্রথম স্নাতক হন তিনজন - রমেন্দ্র নাথ বন্দ্যোপাধ্যায়, শিবপদ চট্টোপাধ্যায় ও মহ্ন্মদ মহিবুল মাজিদ। প্রায় ন'বছর পরে চালু হলেও মেকানিকালের প্রথম স্নাতক হন ছ'জন ১৯৩৩ সালেই - ব্রজেন্দ্র চন্দ্র বাগচী, সতীপতি ভট্টাচার্য, কুমুদ রঞ্জন চৌধুরী, বিজয় গোপাল দত্ত, কালিরুদ্দিন আহমেদ ও অম্বিকাচরণ মুখোপাধ্যায়। নামের ক্রমগুলো লক্ষ্য করলেই বোঝা যাবে শুরু থেকে কলেজে রোল নাম্বার ঠিক হতো পদবীতে ইংরেজি বর্ণমালার ক্রম অনুসারে। যদিও এর মধ্যে ১৮৯৮ সালে চালু হয়েও ১৯০৯ সালে চিরতরে বন্ধ হয়ে গিয়েছিলো কৃষি প্রকৌশল বা এগ্রিকালচার বিভাগ। এছাড়াও ১৯০৬ সালে চালু হলেও ১৯২৯ সাল থেকে বন্ধ হয়ে যায় খনি প্রকৌশল বা মাইনিং বিভাগ - যা পরে ১৯৫৬ সালে আবার চালু করেন তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ বিধান চন্দ্র রায় - নতুন কলেবরে মাইনিং ও জিওলজি বিভাগ হিসেবে।
১৯৩২ থেকে ১৯৩৬ সাল পর্যন্ত্য ইলেকট্রিকাল এবং মেকানিকালের ছাত্রদের পুনর্মিলন উৎসব এবং সেই উপলক্ষ্যে প্রকাশিত পত্রিকাটির নাম ছিলো ইঞ্জিনিয়ার্স অ্যানুয়াল (Engineers' Annual - EA)। ১৯৩৬ সালে প্রথম সব বিভাগ ঐক্যবদ্ধভাবে পুনর্মিলন উৎসব আয়োজন করে। ইঞ্জিনিয়ার্স অ্যানুয়াল ও সিভিল ইঞ্জিনিয়ার্স অ্যানুয়াল মিলে গিয়ে বার্ষিক পত্রিকার অসাধারণ মান বৃদ্ধি হয়ে জন্ম নেয় বি ই কলেজ অ্যানুয়াল (B. E. College Annual)। এই পত্রিকাটির মান ক্রমাগত উন্নত হতে থাকে এবং সংক্ষিপ্ত নাম হয় বেকা (BECA)। BECA-র প্রকাশ উপলক্ষ্যে যে পুনর্মিলন বা শরৎ উৎসবের আয়োজন করা হতো তাকে বলা হতো বেকাফিস্ট (BECAFEAST)। বেকাফিস্ট ১৯৮৯ সালে শেষবার স্বতন্ত্র অনুষ্ঠান হিসেবে মঞ্চস্থ হয়।
১৯৩৬ সাল থেকে পুরোনো ও নতুন ছাত্রদের মধ্যে ঐক্যবদ্ধ পুনর্মিলন বা রিইউনিয়নের (REUNION) শুরু। ২০১২ সালে হয়ে গেল প্ল্যাটিনাম জয়ন্তী রিইউনিয়ন। এখন এটি কলেজ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হিসেবে ভারতের মধ্যে সবথেকে প্রাচীন। পূর্ব ভারতের মধ্যে বৃহত্তম এবং সমগ্র ভারতে যে কোনো রাজ্য সরকারী ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের মধ্যে বৃহত্তম সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। কিন্তূ কি বিচিত্র পরিহাস - দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ, পঞ্চাশের মন্বন্তর, স্বাধীনতা আন্দোলন বা দেশবিভাগে এই উৎসবে ব্যাঘাত না ঘটলেও ২০০৮ সালে একবারের জন্যে বন্ধ ছিলো এই আনন্দানুষ্ঠান - কারণ তৎকালীন ছাত্রদের মধ্যেই গন্ডগোল ও মারামারি। আর একবার ১৯৯১-এ একটা ঠুনকো গাছ বাওয়ালি নিয়ে রিইউনিয়ন বন্ধ ছিলো। "রিইউনিয়ন" (REUNION) স্বতন্ত্র অনুষ্ঠান হিসেবে শেষবার মঞ্চস্থ হয় ১৯৯০ সালে।
এছাড়াও শীতকালে একটা আন্তঃ কলেজ ক্রীড়া অনুষ্ঠান হতো বি ই কলেজ প্রাঙ্গনে। বিশপ কলেজ ময়দান বা এখনকার ওভালে এই শীতকালীন প্রতিযোগিতা শুরু হয় ১৮৯২ সালের ১২-ই ফেব্রুয়ারী উইন্টার মীট (Winter Meet) নামে। শতবর্ষ পার করে স্বতন্ত্রভাবে শেষবার উইন্টার মীট হয় ১৯৮৯ সালে। ১৯৯০ সালেই মাত্র একবারের জন্যে BECA-র প্রকাশ, সংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আর শীতকালীন ক্রীড়াপ্রতিযোগিতা একসাথে হয় বেকামীট (BECAfest + winterMEET = BECAMEET) নামে। সেবারও পুরোনো ছাত্রদের পুনর্মিলন (REUNION) অনুষ্ঠিত হয়েছিলো আলাদা ভাবেই।
১৯৯২ সাল থেকে বার্ষিক পত্রিকার প্রকাশ, সংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, শীতকালীন ক্রীড়াপ্রতিযোগিতা এবং পুনর্মিলন উৎসব একসাথে মিশে গিয়ে চালু হয় চার-পাঁচদিন ব্যাপী মহোৎসবের - নাম হয় রেবেকা (REunion + BECAmeet = REBECA)। তিনটে বিচ্ছিন্ন ইভেন্টের জন্য সময় ব্যয় করা, স্পনসর যোগাড় করা যখন কষ্টসাধ্য ব্যাপার হয়ে দাঁড়াল, তখনই একটু একটু করে একটাই ইভেন্ট বড়সড় করে করার স্বাভাবিক লক্ষ্যেই REBECA র সৃষ্টি, ২২-২৬ জানুয়ারী, ১৯৯২-তে শৈবাল গিরি, অগ্নিমিত্র বিশ্বাস এবং আরো অনেকের উদ্যোগে। রেবেকা (Rebecca) নামটার আর একটা গুরুত্ব হলো এটা মাইকেল মধুসূদন দত্তের প্রথম স্ত্রীর নাম – যদিও এর সাথে রেবেকা অনুষ্ঠানের কোনো যোগসুত্র নেই। ১৯৯২-এ রেবেকার সময় একটা প্রযুক্তি মেলা বা টেক ফেয়ার হয়েছিলো। তখন একটা দাবীও উঠেছিলো যে যৌথ অনুষ্ঠানের নাম হোক ট্যারাবেকা (TEch fair + REunion + BECAmeet = TEREBECA বা TERABECA )।
১৯৯২ সালের রেবেকার শিরোনাম ছিলো "Relish the undiscovered Razzmatazz", বাংলায় মানে করলে দাঁড়ায় "অনাবিষ্কৃত চটকদার ছলাকলার স্বাদ আস্বাদন করুন"। যদিও আসল মানেটা হয়তো সেই বছরের উদ্যোক্তারা ভালো করে বুঝিয়ে বলতে পারবে। আলাদাভাবে BECAMEET বা REUNION বন্ধ হয়ে, প্রথমবার সংযুক্ত অনুষ্ঠান REBECA-র প্রচারপত্রে লেখা হয়েছিলো "যদি বেকামীট '৯০ আপনাকে রোমাঞ্চিত করে থাকে, তাহলে রেবেকা '৯২ আপনাকে চমকিত করবে - তাই আসুন এবং বি ই কলেজের ইতিহাসের সর্বশ্রেষ্ঠ প্রদর্শনীর সূচনা চাক্ষুষ করুন" (if BECAMEET '90 did thrill you, here's REBECA '92 to electrify you - so come and watch history being made in the future of BEC as countdown to the greatest show begins......)।
রেবেকা চারদিন না পাঁচদিন সেটা নিয়ে একটা ছোট্ট বিতর্ক আছে। তবে মূল চারটে দিনের আগের সন্ধ্যায় লর্ডসের মাঠে ম্যারাপ বেঁধে একটা সন্ধ্যেবেলায় সিনেমা দেখানো হতো - সেটা হতো আমাদের বার্ষিক মিলনৎসবের ষষ্ঠী। এখন যদিও বলা হয় রেবেকার চারটে দিন, প্রথমে ছিলো পাঁচ দিন। তবে অনেক সময় আগের একটা দিন বা একটা সন্ধ্যে বিভিন্ন অনুষ্ঠান বা খেলাধুলো থাকে। সাংস্কৃতিক, বিনোদন, সৃজনশীলতা ও আলোচনা সভাগুলো ছড়িয়ে ছিটিয়ে হয় লর্ডসের মাঠ, ইনস্টিটিউট হল, ফার্স্ট লবি, নেতাজী ভবন এবং কিছু খোলা মঞ্চে। খেলাধুলোগুলো মূলতঃ হয় ওভালের মাঠে, বিভিন্ন হোস্টেল বা হলের গেমস রুমে এবং অনান্য জায়গায়। এছাড়াও হয় প্রযুক্তি মেলা, থাকে বিভিন্ন বিজ্ঞাপনদাতার দোচালা, টুকটাক খাবার দোকান। এখন মূলতঃ চারদিন - প্রথমদিন মানে সপ্তমীতে শাস্ত্রীয় সন্ধ্যা (Classical Night) কলেজের ছাত্রছাত্রীদের অনুষ্ঠান, নাটক। পরেরদিন অষ্টমীতে (Beings Night) - শিক্ষা শিল্প মিলন (Academic Industrial Meet), রক, জুক বক্স; নবমীতে Kolkata Night - ফ্লিম ফেস্টিভ্যাল, ওপেন কুইজ, কলকাতার কোনো শিল্পী। শেষদিন দশমীতে (Mumbai Night) মূলতঃ অ্যালুমনিদের সাথে আলাপচারিতা ও প্রীতি ম্যাচ আর সন্ধ্যেবেলায় বম্বের কোনো নামী শিল্পীর অনুষ্ঠান।
বিভিন্ন আন্তঃকলেজ সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতাগুলোর মধ্যে থাকে রবীন্দ্রসঙ্গীত, নজরুলগীতি ও প্রাচ্যসঙ্গীতের একক বা দ্বৈত প্রতিযোগিতা; সাধারণ কুইজ; দ্বিভাষিক বিতর্ক; ব্যঙ্গচিত্র আঁকা; তাৎক্ষনিক বক্তৃতা (Extempore); আবৃতি; প্রাচীরপত্র তৈরী (Postering); কোলাজ তৈরি; লালিকা (Parodi); শ্রুতি নাটক; গানের লড়াই (Antakshari); নকল সংসদ; উৎক্রম (Lateral Inversion); মূকাভিনয়ে শব্দান্বেষন (Dumb Charades); শব্দজব্দ (What the good word); ভাত্তেজ কুইজ (Vattez Quiz); ক্যাওড়া কুইজ (Kao Quiz); যন্ত্রসঙ্গীত; পাশ্চাত্যসঙ্গীত; শ্রেষ্ঠ যুগল (Made for Each Other); সৃজনশীল রচনা; আলোকচিত্ৰবিদ্যা; শিরোনাম প্রদান (Captioning); সম্পদ মৃগয়া (Tresure Hunt); সদ্য যোগ হওয়া কেতা প্রদর্শনী (Fashion Show)। ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় থাকতো অ্যাথলেটিক্স, টেবিলটেনিস, ব্যাডমিন্টন, ভলিবল, বাস্কেটবল, ফুটবল, ক্রিকেট ইত্যাদি।
সব বেশ মজাদার জিনিসপত্র। যেমন তাৎক্ষনিক বক্তৃতার নাম হতো জাম বা হাম - জাম (JAM) মানে জাস্ট আ মিনিট আর হাম (HAM) মানে হাফ আ মিনিট। বিষয়গুলো থাকতো বিভিন্ন রকম; যেমন - নিধিরাম সর্দার, স্যাটি পোজ, পান্ডিয়ার হাফ ডিম, লেডিস হোস্টেল ও ওহম'স ল (Ladies Hostel and Ohm's Law), ওয়ান বাই কস সি (1/CosC), I am in Dire Straits (আমি খুব চাপে আছি), দুর্যোধন ও ট্যান থিটা। যতদুর মনে পরে সিভিলের পাঁচু "নিধিরাম সর্দার" বলতে গিয়ে বলেছিলো আগে থেকে তৈরী করা একটা সুদীর্ঘ ভ্রমন কাহিনী। লোকজন যখন শিরোনাম ও বিষয়ের মধ্যে কোনো মিল খুঁজে পাচ্ছে না তখন পাঁচু শেষ করেছিলো এই বলে যে, ফেরার সময় হাওড়া ষ্টেশনে চাওলা একটা হাতল ভাঙ্গা কাপে ওকে চা দিয়েছিলো, সেই দেখে ওর মনে হয়েছিলো কাপটা যেন - ঢাল নেই, তলোয়ার নেই, 'নিধিরাম সর্দার'। আমরা হাততালি দিয়ে উঠলাম - 'নিধিরাম সর্দার' খুঁজে পাওয়ার জন্যে নয়, বক্তৃতা শেষ হবার জন্যে!
তাৎক্ষনিক বক্তৃতার সাথে আমাদের পরিচয় হতো কলেজ জীবনের শুরুতেই। অনেক শান্তশিষ্ট সিনিয়ারদেরও র্যাগিং-এর সিলেবাসে থাকতো তাৎক্ষনিক বক্তৃতা, অনেক আগে থেকেই। যারা এবার র্যাগিং-এর গল্প শুরু হবে ভেবে মিটিমিটি হাসছেন, তারা পকেট থেকে রুমাল বার করে হাসি মুছে ফেলুন। এই লেখা শুধু তাৎক্ষনিক বক্তৃতা নিয়ে। তবে র্যাগিং পিরিয়ডে সিনিয়াররা আমাদের মানবসভ্যতার উৎপত্তি এবং নিজ নিজ জন্মের দশমাস দশদিন আগে ঘটে যাওয়া প্রক্রিয়াগুলি নিয়ে বক্তৃতা দিতে বলতো। তবে সে বক্তৃতায় - "ব্রহ্মা জানেন গোপন কম্মোটি" বলে পার পাওয়া যেত না। বানভট্টদার কাছে জানা, ওর কলেজে এসে প্রথম দিন তাৎক্ষনিক বক্তৃতার বিষয় দেওয়া হয়েছিলো 'কালো কুকুর এবং কালো হাঁড়ি'। বানভট্টদা বলতে শুরু করেছিলেন - "আমার একটি কালো কুকুর ছিলো যার নাম কালো হাঁড়ি আর একটি কালো হাঁড়ি ছিলো যার নাম কালো কুকুর। কালো হাঁড়িকে (যা আসলে কালো কুকুর) রোজ কালো কুকুরে (যা আসলে কালো হাঁড়ি) খেতে দিতাম। কালো হাঁড়ি কখনো কখনো ----" এই পর্যন্ত্য বলে সিনিয়ারদের মুখের দিকে তাকিয়ে বুঝলেন হাওয়া খারাপ। এই সময় ঝপ করে আলো নিভে গেল - লোডশেডিং। অন্ধকারে কালো হাঁড়ি আর কালো কুকুর একাকার হয়ে গেল। বানভট্টদাও বাঁচলেন আর শ্রোতারাও হাঁপ ছেড়ে বাঁচলেন। যারা এই ঐতিহাসিক বক্তৃতাটি বুঝতে পারেন নি তারা একটা ফ্লো-চার্ট লিখে ফেলুন - জলের মতো পরিষ্কার হয়ে যাবে।
ক্যাওড়া কুইজে প্রশ্নগুলো থাকতো সব বিদঘুটে মার্কা - জামাই ঠকানো প্রশ্ন। যেমন কলকাতার সব থেকে ব্যস্ত রাস্তা কি? উত্তর - মেয়ো রোড, কারণ গান্ধীজি মোড়ের মাথায় কবে থেকে দাঁড়িয়ে আছেন, কিন্তূ এখনো রাস্তা পার হতে পারেন নি। অথবা বি ই কলেজের মেয়েরা কোন মাজন ব্যবহার করে? উত্তর বিনাকা টুথপেস্ট, কারণ ওটা B E Neka বা বি ই ন্যাকা, তাই। তখন কলেজে একটাই চিপ ষ্টোর যেটাকে অনেকে আড়ালে চিট ষ্টোরও বলতাম। তবে বই, খাতা, ল্যাবের ফাইল থেকে সব কিছুই পাওয়া যেতো। একবার একটা সাধারণ কুইজে প্রশ্ন ছিলো চিপ ষ্টোরের 'জানা'দার পুরো নাম কি? ছাত্রছাত্রীরা বলতে না পারায় উত্তরটা দিয়েছিলেন পিকসা - প্রোফেসর প্রদীপ কুমার রায়। উত্তর ছিলো দেবেন্দ্র নাথ জানা - এখন যার ছেলে ষ্টোরটা চালান আর নাতি আমাদের কলেজ থেকে এই বছরের স্নাতক।প্রোঃ পি কে রায় উত্তরটা বলে বলেছিলেন ওনাদের সময় (১৯৬০-৬৫) চিপ ষ্টোরে কোনো জিনিস না পাওয়া গেলে মজা করে বলা হতো, 'দেবেন জানা, উনি কি দেবেন জানা আছে'!
মুকাভিনয় করে যেসব শব্দ বা শিরোনাম বলতে হতো সেগুলো নিয়েও বেশ ভালোই মজা হতো। একবার ভিটামিন জি মানে যেটাকে অনেকে গাঁজা বলে, তার ধুমকিতে গোকুল পান্ডা আর অনির্বান সেনগুপ্ত ঠিক করলো অংশগ্রহণ করবে। একটা শিরোনাম ওদের মুকাভিনয় করে বোঝাতে হবে। দেখা গেলো ভিটামিন জি-র প্রভাবে অনির্বান হঠাৎ গোল হয়ে মঞ্চে পাক খেতে শুরু করলো আর গোকুল একটা ব্রেক কষার চেষ্টা করছে। তাতেও অনির্বান গড়াতে গড়াতে এসে মঞ্চের সামনে বসে থাকা দিন্দা আর চিনুকে ধাক্কা মারলো, ওরা চেয়ার নিয়ে উল্টে পড়ে গেলো। গোকুলের ব্রেক কষার চেষ্টা সত্বেও অনির্বান একদম মঞ্চের সামনে এসে থামলো। কারণ ওদের শিরোনাম ছিলো - Dunlop is Dunlop - Always Ahead! ভাত্তেজ কুইজে সহযোগীকে ইঙ্গিত দিয়ে আর হ্যাঁ বা না বলে বোঝাতে হতো কি বিষয়, কি ভাষা, কি জিনিস। একজন পরিচালকের কাছে চিরকুট দেখেই কাঁদতে শুরু করলো। সেকেন্ডের মধ্যে সহযোগী বলে দিলো জিনিসটা হলো একটা সিনেমার নাম - রুদালী।
গানের লড়াই বা Antakshari-তে মোটামুটি ল্যামিদা আর পরে মামা (ইলেকট্রিকালের অমিতাভ দাস) হতো অবিসংবাদিত পরিচালক। মামার গানের দখল ছিলো বেশ ভালোই - সুরেলা গলা না হলেও অফুরন্ত ভাণ্ডার। আর একজনও ছিলো গানের ভাণ্ডার - সিভিলের সোমা সিনহা। একবার যতদুর মনে পরে থার্ড ইয়ারে রেবেকার ওই শীতের রাতে দেড়টার সময় সোমা সিনহা 'খ' দিয়ে শুরু গান ধরলো - 'খুল্লাম খুল্লা প্যার করেঙ্গে হাম দোনো'। ইনস্টিটিউট হলে জনগণ শিহরীত হয়ে আওয়াজ দিলো - বলে কি? এই হাড় কাঁপানো ঠান্ডায় মাঝ রাত পার করে! আর একবার মনে হয় অন্তাক্ষরীতে ল্যামিদা এমন কিছু অজানা ভোজপুরী আর অহমিয়া গান ধরেছিলো যে প্রতিযোগীদের সাথে পরিচালকরাও কুপোকাত। যতদুর মনে পরে ওই গানগুলোর অনেকগুলোই তাৎক্ষনিকভাবে বানানো। আজ সবই স্মৃতি - মরচে পড়ে গেছে।
এছাড়াও কলেজের প্রতিভা বাছাই আর শুরুর ঘন্টা বাজতো প্রিবেকা (PREBECA) অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে। যতদুর মনে পরে ১৯৯৬ আর ১৯৯৭-এ দুবার রেবেকাতে কোনো ঘাটতি হয়নি, বরং উদ্বৃত্ত হয়েছিলো। সেই পয়সায় হ্যাং ওভার বলে একটা ছোটো অনুষ্ঠান করা হয়েছিলো। কিন্তূ সেই দুবারের কেন্দ্রীয় চরিত্র সৌগত মুখার্জী, আমাদের চিংড়ি সব হিসেব নিকেশ মিটিয়ে আমাদের ছেড়ে চলে গেছে গত বছর। যেরকম নিষ্ঠার সঙ্গে রেবেকার সব কাজ সামলেছিলো সেই ভাবেই অফিসের সব কাজ সামলাতে গিয়ে ছুটির দিনগুলোও যতটা সম্ভব কাজ করতো। এক সকালে ঘুমের মধ্যেই ভগবান ওকে পুরোপুরি ছুটি করে দিয়েছেন।
……………..
রেবেকার শুরু থেকে অন্ততঃ বেশ কিছু বছরের কথা বলতে গেলে ত্রিপুরার ছেলে ল্যামি মানে শঙ্খকর ভৌমিকের কথা বলতেই হবে। জনপ্রিয় চরিত্রটি কলেজে এসে হাজির হয় ১৮-ই অগাস্ট, ১৯৯১ সালে। ল্যামির কথামত 'আমরা মেঘের মতো আকাশে ঘুরে বেড়াই, BEC দেখে বৃষ্টি হয়ে ঝরে পড়লাম'। চেহারাটি ছিলো একদম একটা ঝাঁটার কাঠির মতো, তাই নাম হয় 'ল্যামিনা', সেই থেকে ল্যামি। চার বছরের জন্যে এলেও ছটি বছর কাটিয়ে পাশ করে ১৯৯৭ সালে। সেই হিসেবে আমার ব্যাচমেট হলেও আমাদের অনেকের কাছেই ল্যামিদা - বিশেষতঃ যারা হোস্টেল ১৫ তে এসে উঠেছিলাম। অতিরিক্ত দুবছরের জন্যে দায়ী বি ই কলেজের সাপের উৎপাতে চিৎপাত হয়ে পড়া। কলেজে ঢুকেই শুনেছিলাম - 'এখানে খুব সাপের ভয়'। এই শুনে আমরা কেউ কেউ কোলে মার্কেট থেকে একটা করে টর্চ কিনে আনলাম।
কিন্তূ প্রথম সেমেস্টারের ফল প্রকাশ হতেই দেখা গেলো প্রায় অর্দ্ধেক জনগণ ঢালাও সাপ্লিমেন্টারী পেল সোশ্যাল সাইন্স আর টেকনিকাল কমিউনিকেশনে। বুঝলাম 'সাপ' কাকে বলে। এই সাপ কোনো সরীসৃপ নয়। গঙ্গার ধারে বলে সরীসৃপের প্রাচুর্য্যও কলেজে ভালোই ছিলো - তবে সেগুলো সব ছিলো ভালো প্রাণী। বি ই কলেজে সাপের কামড়ে কোনো দুর্ঘটনা ঘটেনি। তবে ওই সাপ্লিমেন্টারীর সাপগুলো ছিলো ভারী ভয়ানক। বিষের মাত্রা নির্ভর করতো সাপটি কোন ঋষির (মানে প্রফেসর) পোষ্য তার উপর। কয়েকটা ঋষির সাপ এতই বিষধর ছিল যে তাদের অভিশাপে কিছু ছাত্রের জীবনহানিরও সম্ভবনা দেখা দিত। সাপ (সাপ্লিমেন্টারী), রিসাপ (রিপিট্ সাপ্লিমেন্টারী) দিয়েও শাপমুক্তি না ঘটলে বছর নষ্ট হতো। এক বছর নষ্ট হলে সেই রুগীকে আবার সাপে কামড়ালে কলেজ থেকে বহিষ্কার করে দেওয়া হতো। ল্যামিদার এই অবস্থা হলেও শেষ পর্যন্ত্য টিকে গিয়েছিলো। ল্যামি কলেজ ছেড়ে যায়নি, না কলেজদেবতা ল্যামিকে সহজে ছাড়েনি সেটা ঠিক জানিনা। তবে কলেজ ও আপামর বিদ্যার্থীরা এতে বেশ লাভবান হয়েছিলো।
১৯৯২-র জানুয়ারীর এক সকালে প্রথম রেবেকার প্রস্তুতির অঙ্গ হিসেবে বকুলতলায় একটা আলপনা আঁকা হয়েছিল। ঠিক সেই জায়গাটায় দাঁড়িয়ে তৎকালীন প্রিন্সিপ্যাল রেবেকার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। আলপনা আঁকার জন্য ফার্স্ট ইয়ারের কিছু ছেলেপুলেকে ডেকে আনা হয়েছিল। তাদের মধ্যে ল্যামিও ছিল। ১৯৯৫ থেকে শুরু হয় রেবেকার দিনগুলির জন্যে প্রকাশিত একটা দৈনিক পত্রিকা - Rebecstatique (রেবেকস্টাটিক)। নানান মজার চুটকি, ধাঁধা, কার্টুন দিয়ে ঠাসা এক মুখরোচক নিবেদন। ল্যামিদা ছিলো প্রথম থেকেই রেবেকস্টাটিকের কার্টুনিস্ট। তা বলে আবার ভাববেন না ল্যামি মাইনিং ইঞ্জিনিয়ার হলেও দারুন কার্টুন আঁকত। ব্যাপারটা উল্টো, ল্যামি দারুন কার্টুনিস্ট হলেও অবসর সময়ে মাইনিং ইঞ্জিনিয়ারিংটাও পাশ করে রেখেছিলো - একস্ট্রা কারিকুলার অ্যাকটিভিটি হিসেবে। পাশ করার পর দুয়েক বছর রেবেকাতে আসতে না পারলেও অফিসের লোকের হাত দিয়ে টিসু পেপার বা সিগেরেটের রাংতায় আঁকা কার্টুন পাঠিয়ে দিতো রেবেকস্টাটিকের জন্যে। ২০০০ সালের রেবেকস্টাটিকে ল্যামিদার কার্টুনগুলো ছাপা হতো যে কলামে তার নাম দেওয়া হয়েছিলো - ল্যামি দ্য ভিঞ্চি। আমরা সবাই মুখিয়ে থাকতাম ল্যামিদার ফাটাফটি নিবেদন দেখবো বলে। এছাড়াও রেবেকার একটা করে পোস্টার বানানো হতো - বিভিন্ন সাম্প্রতিক বিষয় বা ভাবনা নিয়ে। আমাদের সময় প্রায় সবগুলোই ছিলো ল্যামিদার আঁকা - পরে যদিও যোগ্য সঙ্গত দিত পরের বছরের সিভিলের ধীমান আর ইলেকট্রিকালের কল্লোল। বাকি ল্যামিচরিত তুলে রাখলাম পরের জন্যে। কুত্তা, গ্যাম্বো, হাম্পু, দেবাঞ্জন সেনগুপ্ত, গোকুল - আরো অনেকে ছিলো যারা রেবেকার জন্যে উদয়াস্ত খাটতো।
যারা বেকসুতে থাকতো তারা ছাড়াও রেবেকার জন্যে নির্বাচনের মাধ্যমে আলাদা করে একটা তিনজনের কমিটি গড়া হতো। চতুর্থ বছরের একজন সাধারণ সম্পাদক, তৃতীয় বছরের একজন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আর দ্বিতীয় বছরের একজন কোষাধক্ষ্য। আমরা দল বেঁধে চাঁদা তুলতে যেতাম। প্রথমবছর কলকাতায়, তারপর একটু সিনিয়ার হলে জামশেদপুর, বেঙ্গালুরু, দিল্লী, মুম্বাই এমনকি কেউ কেউ বিদেশেও যেত। আমি প্রথম দুবছর কলকাতায় চাঁদা তুলতে গিয়েছিলাম - কিন্তূ বাস ভাড়াটাও পাইনি বলে তৃতীয় বছরে বাওয়াল করেছিলাম। আসলে কমিটির নিয়ম ছিলো বাসের বা ট্রেনের টিকিট জমা দিয়ে টাকাটা বুঝে নেবার। কিন্তূ আমাদের তখন বিনা টিকিটে যাবার অভ্যেস - টিকিট পাবো কোথায়। তবে ভাড়া বাবদ টাকাটা পেলে লিপি বা বঙ্গবাসী বা ঝর্ণা ঘুরে আসা যেত। একটু রোল বা মিষ্টি খাওয়া যেত। শালারা তাও দিলি না!
চাকুরীজীবী দাদাদের কাছ থেকে চাঁদা নেওয়ার সেই প্রথা এখনো চলে আসছে। কলেজের ছেলেরা এসে সুযোগ বুঝে শুরু করে পাঁচ হাজার থেকে, তারপর দরদাম করে দু'হাজার বা এক হাজার নেবার সময় প্রতিজ্ঞা করে যায় তোমার নাম লেখা থাকবে আমাদের লিষ্টে, কলেজে গিয়ে কিছু দিতে হবে না। অবধারিতঃ ভাবে সেই লিষ্ট কোনদিন তৈরী হয় না, আর সবাই জানে কলেজ গেলে আর একবার 'কিছু' দেবার একটা আব্দার হবে যেটা মান রাখতে মানতেই হবে। তবে এখন গেট থেকেই অনেক বিজ্ঞাপনের চমক আর চটক থাকে। তার মাঝে কষ্ট করে খুঁজে নিতে হয় নিজেদের কলেজের নামটা। তবে এখন রেবেকা আরো উন্নত হয়েছে, একটা মিউজিক অ্যালবাম প্রকাশ হয় রেবেকা উপলক্ষ্যে ২০০৯ সাল থেকে। আরো টুকিটাকি অনুষ্ঠান যোগ হয়েছে, বাদও পড়েছে কিছু কিছু।
আর একটা কথা রেবেকা হয় সাধারনতঃ জানুয়ারীর শেষ বা ফেব্রুয়ারীর মাঝামাঝি। নতুনদের মতো পুরোনো ছাত্রছাত্রীরাও এসে ফেলে যাওয়া দিনগুলো মনে করার চেষ্টা করে, কাটিয়ে যায় নিজেদের ফেলে আসা হল বা হোস্টেলের ঘরগুলোতে। ওই ক'দিন অন্য সব হল বা হোস্টেলের মতো পান্ডিয়াতেও (মানে আমাদের সময়ের একমাত্র লেডিস হোস্টেল) তাড়াতাড়ি ফেরার কোনো নিষেধাজ্ঞা থাকতো না। গতবারের মতো দ্বিতীয় রেবেকাও শুরু হয়েছিলো ১৪ ই ফেব্রুয়ারী - মানে ভ্যালেনটাইন ডে-তে। আর তাছাড়া বঙ্গজীবনের প্রেমের দিন মানে স্বরস্বতী পুজোও তো ওই সময়ই। তাই ওই সময়টাতে প্রাকৃতিক কারণে কিছু নতুন প্রেম জেগে উঠতো, কেউ কেউ মনের কথাটা শুভদিন দেখে বলেই দিত। তার মধ্যে কিছু ঝুলতে ঝুলতে নেমে যেত মানে কিছুজনের পাগলী জুটে যেত। আর বাকি কয়েকজন কিছুদিন পাগল হয়ে বকুলতলায় বসে সিগারেট টানতো আর রুমে ফিরে পরশপাথর শুনতো 'ভালবাসা মানে ধোঁয়া ছাড়ার প্রতিশ্রুতি', আর আশায় থাকতো ভাদ্র মাসের!
রেবেকা ছাড়াও কিছু কিছু অনুষ্ঠান হয় যেমন কখনো কোনো বিভাগের ৫০ বছর বা ১০০ বছর বা ১৫০ বছর পূর্তি। বেকা ছাড়াও ১৯৬৩-৬৪ নাগাদ একটা পত্রিকা বেরুতো 'সাহিত্যিকা' নামে - কোনো এক কল্যাণদার উদ্যোগে। ওই সময়ই বেকসু প্রেসিডেন্ট প্রদীপ সান্যালের নেতৃত্বে প্রদীপ কুমার রায় (পরবর্তী পিকসা), সন্তোষ সিনহাদের উদ্যোগে তৈরী হয় ইনস্টিটিউট হলের (আগেকার নাচঘর) লাগোয়া কলেজ ক্যান্টিন। বিভিন্ন অনুষ্ঠান আর রেবেকার দিনগুলোতে ক্যান্টিনে জমতো আড্ডা আর পরিকল্পনা - দুধ তামাকের সাথে খাবার দাবারের যোগান দিয়ে যেত খুরশিদদা। সেন হলের উদ্যোগে একটা অনুষ্ঠান হয়েছিলো ১৯৯৩-এ সেনশেসন (Sensation); কিছুদিন ৭ নং হোস্টেলের একটা নিবেদন হতো সপ্তক (Soptok) বলে; রিচার্ডসনের ছেলেদের উদ্যোগে বেশ কয়েক বছর ধরে হচ্ছে রিক্টার (Richter)। এরকম একটি অনুষ্ঠানের সময়ই রিচার্ডসনের সামনে কিছু বাতিল পাইপের টুকরো দিয়ে ছেলেরা তৈরী করে বেন্ডিং মোমেন্ট গেট - যেটা এখন অ্যালুমনি হাউসের সামনে।
সেনশেসনে এসেছিলেন সুমন চট্টপাধ্যায়, সঙ্গে ওনার মেয়ে ভার্জিনিয়া। হঠাৎ তাকে উদ্দেশ্য করে গেয়ে উঠলেন, 'তুই হেসে উঠলেই সূর্য্য লজ্জা পায়'। সেই সুমন আজ বিক্ষুব্ধ সাংসদ, শোনা যায় তাই মনে হয় লজ্জা পাননি, অন্য সম্পর্কের জন্যে প্রথম স্ত্রীর সাথে সেই মেয়েকেও ত্যাগ করতে। এক রেবেকায় এসেছিলেন অঞ্জন দত্ত, সঙ্গে তার ছেলে। গানের একটা লাইন ছিলো, 'একটা মেয়ে দশটা ছেলে দিচ্ছে শিষ'। হাজির ছাত্ররা সেই সুত্রে একসঙ্গে শিস দিয়ে ওঠায়, হঠাৎ অঞ্জন দত্ত খার খেয়ে স্টেজ থেকে চলে গিয়েছিলেন। তারপর উদ্যোক্তাদের অনুরোধে ফিরে এসে কিছু গান করলেও, তাল কেটে গিয়েছিল। এছাড়াও মিস জোজো, মিস রানী বা সোনু নিগম, অনুরাধা পাড়োয়াল, অজিত পাণ্ডে, শ্রীকান্ত আচার্য্য, শ্রাবনী সেন, ইন্দ্রনীল সেনের মতো অনেক শিল্পীর এবং মহীনের ঘোড়াগুলি, চন্দ্রবিন্দু, ফসিলস, ক্যাকটাসের মতো বিভিন্ন গানের গ্রুপের বা ব্যান্ডের গান শোনার সৌভাগ্য হয়েছে। উল্লেখযোগ্য বি ই কলেজর ছাত্র স্বনামধন্য আর্কিটেক্ট রঞ্জন প্রসাদের গান শোনার অভিজ্ঞতা। সিভিলের ১৪০ বছরের গল্প প্রতিশ্রুতি মতো পরের এক অধ্যায়ে থাকবে।
পরিশেষে জানাই যতোই চেষ্টা করা হোক না কেন, অনেক সময়ই রেবেকার ভাণ্ডারে শেষ পর্যন্ত্য ঘাটতি থাকতো। যেটা ঘাটতি হতো সেটা মিটমাট করা হতো পাঁচুদাকে (ডেকরেটার্স কাম আর্টিস্ট এন্ড অর্ডার সাপ্লায়ার্স) বাকি পয়সাটা না দিয়ে। নাহলে শেষ দিকে একটা উদ্যোগ নেওয়া হতো বাইরে থেকে বা অ্যালুমনিদের কাছ থেকে বাড়তি কিছু আদায় করার। এতে অধ্যাপকেরাও সক্রিয় সহযোগিতা করতেন। এছাড়াও নিজেদের মধ্যেও কিছু চাঁদা তোলা হতো যাতে বেশীর ভাগটাই দিত আখতারদা (ফার্স্ট গেট), তরুণদা (বসন্ত কেবিন - এখন মনজিনিস) আর খুরশীদদা (ক্যান্টিন)। তাতেও না হলে পরের বছর দিয়ে দেওয়া হবে বলে চালানো হতো। তবে সেটা এখনকার মতো ছাত্রদের উপড় চাপিয়ে দেওয়া হতো না। মাঝে মাঝে ভয় হয় এখনকার যে প্রবণতা (মানে যা শোনা যায়), হিসাবপরীক্ষা না হলেও ছাত্রদের মার্কশীট আটকে রেখে জরিমানা হিসেবে ঘাটতির টাকা যোগাড় করা, তাতে ভবিষ্যতে রেবেকাটাই না উঠে যায়।
No comments:
Post a Comment
Note: Only a member of this blog may post a comment.