Wednesday, June 12, 2013

শ্লীল না অশ্লীল?

খাপছাড়া -  

 

শ্লীল অশ্লীল নিয়ে অনেক কথা হচ্ছে। কেউ কেউ নিজে লেখার সাহস না পেয়ে আনন্দবাজারের একটা খবর শেয়ার করে দিচ্ছেন। যে কথা আমরা চাই না আমাদের ছেলে মেয়েরা বলুক বা আমরা নিজেরাও গুরুজনদের সামনে সেগুলো ব্যবহার করতে দ্বিধা বা লজ্জা বোধ করি, সেগুলোই হয়তো অশ্লীল। কেউ বলছেন আরে এতো কোনো ব্যাপারই নয়। চলো উৎপত্তি, বুৎপত্তি, ঠিকুজি-কুলুজি পরীক্ষা করে দেখো। দিল্লীতে চলে, গ্রামে চলে, কলেজে চলে, তাই ঠাকুরঘরেও চলুক, বাবা ছেলের মধ্যেও চলুক, সংসদেও চলুক। এটা নিয়ে নানা মুনি নানা মত। তবে আশাকরি একটা জিনিস নিয়ে কেউ বেশী প্রতিবাদ করবেন না যে গণতন্ত্রে বিধানসভা বা সংসদের প্রতিনিধি হতে গেলে তাদের যে শিক্ষা বা রুচি বা সততা থাকতে হবে তার কোনো মানে নেই। বরং বিভিন্ন ঘটনায় দেখেছি সেগুলো না থাকলেই যোগ্যতা পাওয়া যায়।

 

এই প্রসঙ্গে বলি একটি পরিবারের কাহিনী - একদম সত্য ঘটনা। একটু অনুমতি নিচ্ছি অল্প কথায় কিছু বলার জন্যে। শুধু আমার জানার ইচ্ছে এই পরিবারটিকে আপনারা কি বলবেন - ভদ্র না ইতর? আর এই কাহিনীটিকে কি বলবেন - শ্লীল অশ্লীল? যাইহোক আসল নামগুলো একটু গোপন রেখে গল্পটায় আসা যাক। ইচ্ছে করে একটু পুরোনো বা অদ্ভুত নাম ব্যবহার করছি যাতে কারো মনে না হয়, কোনো ব্যক্তিকে আমি অনিচ্ছাকৃত ভাবে ব্যঙ্গ করেছি। এটি সম্পূর্ণ সত্য ঘটনা, আমি শুনেছিলাম এক খুবই বিশ্বস্ত লোকের কাছে। নাম করছি না কারণ যার কাছে শুনেছি তিনি বেশ এক জনপ্রিয় নাম এবং এই পরিবারটিকে খুব কাছ থেকে দেখেছেন।

 

শুরু করি এক নারীর কথা দিয়ে। ধরা যাক তার নাম সুতনুকা। আমাদের অগ্রজ নারায়ন সান্যাল মহাশয় ১৯৮৩ সালে একটা বই লিখেছিলেন "সুতনুকা একটি দেবদাসীর নাম" পরের বছরই লেখেন "সুতনুকা কোন দেবদাসীর নাম নয়" নামটা সেখান থেকে নেওয়া হলেও, আমার কাহিনীর সুতনুকা এক বিশাল বড়লোকের মেয়ে। সে বিয়ের আগেই একটি চালচুলোহীন মেধাবী ছেলের প্রেমে পড়ে। তাদের অবৈধ সম্পর্কে ফলে একটি ছেলেও জন্ম নেয় - যার নাম জারজ। স্বভাবতই সুতনুকার বাড়ি থেকে এই সম্পর্ক মেনে নেয় না। জারজকে কোলেপিঠে করে মানুষ করে তার বাবা এবং লেখাপড়ায় সেও হয় বাবার মতই মেধাবী।

 

এরপর সুতনুকার বিয়ে হয় 'দেবদাস' কাহিনীর হাতিপোতা গ্রামের জমিদার ঘরের এক দোজবরে ছেলের সাথে। এই দোজবরে পাত্রের বিকৃতবুদ্ধি প্রথমপক্ষ তার নিজের ছেলেদের ছোটবেলাতেই মেরে ফেলেছিলো। অনেকচেষ্টায় ভীমসেন বলে একটি ছেলেকে শেষমুহুর্তে নিশ্চিত মৃত্যুর রক্ষা করা হয়। যাইহোক জমিদারের দ্বিতীয়পক্ষের বিয়ের পর সুতনুকার দুটো ছেলে জন্ম নেয় ঋতুপর্ণ চিত্তবান। এসব ক্ষেত্রে যা হয় ছেলেদের মনে বাবা মায়ের জীবনযাত্রার প্রভাব পরেই। হয় তারা সেই রকম হয় অথবা একদম অন্যরকম। সৎমায়ের উপড় বিরক্ত হয়ে ভীমসেন ঠিক করে সে বিয়েই করবে না। এতে তার সৎমায়েরও বেশ আনন্দ হয়; কারণ বুড়ো বর মারা গেলে, বাপের সম্পত্তি তার নিজের ছেলেরাই পাবে।

 

ঋতুপর্ণ বড় হবার পরে পাড়ার গুন্ডাদের সাথে এক বিশাল ঝামেলায় জড়িয়ে ড়ে এবং পরিণামে অকালেই মারা যায়। সৎমায়ের উপড় রাগ থাকলেও ভীমসেন ছোটো ভাই চিত্তবানকে খুব ভালবাসত এবং পাড়ার গুন্ডাদের থেকে আগলে রাখতো। ভীমসেন বেশ বলবান, পাড়ার লোকজন তাকে একটু সমঝে চলে। পড়াশুনোতেও বেশ ভালো এবং বাড়ির একমাত্র রোজগারে সদস্য। আস্তে আস্তে বিধবা, অসহায় সুতনুকাও ভীমসেনকে স্নেহের চোখে দেখতে শুরু করে। এদিকে বড় হবার পর চিত্তবান একটি নয়; দু দুটি বিয়ে করে বসে - দুজনেই আবার সহোদরা বোন। এসব গ্রামের দিকে এখনো মাঝেমাঝে এসব হয়, রীতিনীতির তোয়াক্কা না করেই। ভীমসেনই পুলিশ, সমাজ এইসবের হাত থেকে ছোট ভাইকে বাঁচিয়ে আনে। একটা জটিল পরিবারে আরো জটিলতা তৈরী হয় যখন অতিরিক্ত সিগারেট, গাঁজা সেবনের ফলে চিত্তবানের হঠাৎ করে ক্ষয়রোগ ধরা পরে এবং চিকিৎসার খুব বেশী সুযোগ না দিয়ে মারা যায়।

 

তবু হয়তো ঠিক ছিলো, কিন্তূ সুতনুকার এবার নতুন চিন্তা শুরু হয়, বংশের কি হবে? এখনো অনেক গ্রামেগঞ্জে বা অনেক রক্ষণশীল পরিবারে এইসব সাধারণ ব্যাপার। দুই সদ্যবিধবা বৌমাকে নতুন করে বিয়ে দিলে তো নিজের বংশের রক্ষা হবে না। শেষকালে যে সৎছেলেকে সুতনুকা বিয়ে করতে দেয় নি, তাকেই বাবা বাছা বলে ধরে বসে, যাতে সে ভাইয়ের দুই বিধবা বউয়ের সাথে অবৈধ সম্পর্কে লিপ্ত হয়ে চেষ্টা করে যেন তাদের ছেলেপুলে হয়। এতে ধর্মমতে বংশরক্ষাও হলো আর বাইরের লোকের কাছেও জানাজানি হলো না। শুনেই হয়তো গা গুলিয়ে উঠছে সুতনুকার বিকৃত মানসিকতার কথা শুনে।

 

শোনা যায় ভীমসেন এই অনুরোধে মর্মাহত হয়ে বাড়ি ছেড়েই চলে যায়। কিন্তূ সংসার চলবে কি করে? জমিদারীই বা দেখবে কে? তাই সুতনুকা অনেক বুঝিয়ে ভীমসেনকে বাড়ি নিয়ে আসেন। কিন্তূ বংশরক্ষার চিন্তাও ছাড়তে পারেন না। শেষে ভীমসেনকে প্রয়োজনটা বোঝাতে সক্ষম হলেও, ভীমসেন শর্ত দেয় যে সে এসবের মধ্যে নেই। কিন্তূ সুতনুকা যদি তার বিয়ের আগের সেই জারজ ছেলেকে রাজি করাতে পারে তাহলে পাড়া প্রতিবেশী বা পুলিশের ব্যাপারটা ভীমসেন সামলে নেবে। ডুবে ডুবে জল খেলেও, উপরের বুদবুদ চাপা দেবে কে? ভীমসেন ইতিমধ্যেই লোকমুখে জারজের কথা জানতে পেরেছিল।

 

স্বার্থ এমন জিনিস এবার সেই ছোটোবেলায় ফেলে আসা জারজের খোঁজ শুরু করে সুতনুকা। শেষমেশ তাকে খুঁজেও পায় চিরজীবন অকৃতদার বাবার প্রতিষ্ঠা করা এক বৃদ্ধাশ্রমে কর্মরত অবস্থায়। তারপর ছলেবলে তার আবেগকে কাজে লাগিয়ে এবং অর্থের লোভ দেখিয়ে নিজের প্রস্তাব পেশ করে। জারজ প্রথমে অবাক হলেও শেষে জমিদারীর মালিক হবে নিজের ছেলে - হোক না সে অবৈধ, আর সেই সুযোগে জারজ নিজেও একটু মুরব্বিয়ানা করতে পারবে এসব ভেবে রাজি হয়ে যায়। কিন্তূ এখনো তো বিধবা বৌমারা জানেই না শাশুড়ির গুপ্ত পরিকল্পনা। দজ্জাল শাশুড়ি হলেও এতটা সেটা কেউ কি ভাবতে পারে! যাইহোক সুতনুকা নিজের প্রভাব খাটিয়ে জোর করে বিধবা বৌমাদের বাধ্য করেন নিজের কুমারী অবস্থায় ফেলে আসা ছেলের সাথে রাত কাটাতে। দুই বৌমা মানসিক চাপে শেষ পর্যন্ত্য বাধ্য হয় এই কাজে সামিল হতে। যথাসময়ে দুজনেই দুটো ছেলের জন্ম দেয়।

 

তারপর আর এগিয়ে লাভ নেই। তবে সেই দুই অবৈধ ছেলের বংশধরদের মধ্যে পরে যখন গোলমাল চরমে উঠে তখনো সুতনুকা বেঁচে। যে জমিদারীর বংশরক্ষা নিয়ে এতো কাঠখড় পোড়ানো, সেই বিষয়ই তখন বিষ। ভাইয়ে ভাইয়ে মামলা, থানা পুলিশ, মারামারি কাটাকাটি। ভীমসেন তখনও চেষ্টা করে যাচ্ছেন দুপক্ষের মধ্যে বয়ষ্ক হিসেবে মধ্যস্থতা করার, কিন্তূ কাকস্য পরিবেদনা।

 

দুই পক্ষের মধ্যে জমিদারী নিয়ে প্রায় মারামারি শুরু হবার উপক্রম হলে সেই জারজ এসে তার স্বার্থপর কুমারী মাকে সঙ্গে করে নিয়ে যায় নিজের সেই বৃদ্ধাশ্রমে। মানুষের মনস্তত্ত্ব বোঝা বিধাতারও অসাধ্য। সাথে নিয়ে যায় সেই দুই সহোদরাকেও যারা একদিক থেকে কয়েক রাতের জন্যে জারজের অবৈধ্য পত্নী - হতে হয়েছিলো সুতনুকার চাপে পড়েই।  সেই জারজের হাত ধরেই সংসার ছেড়ে বেড়িয়ে পরে, সেই শাশুড়ির সাথে একই বৃদ্ধাশ্রমে গিয়ে জীবনের শেষ কটাদিন একটু পুজোআর্চার মধ্যে কাটানোর জন্যে।

 

পাঠকের কাছে অনুরোধ পুরোটা পড়লে দয়া করে মতামত দেবেন সুতনুকা, জারজ ভীমসেনের ব্যাপারে। আর ইটা সত্য ঘটনা, কিন্তূ কাহিনীটিকে কি বলবেন শ্লীল না অশ্লীল?

No comments:

Post a Comment

Note: Only a member of this blog may post a comment.