Monday, December 31, 2012

নতুন বছরের অনুরোধ


তোমরা আমার জন্যে কাঁদছো,
মোমবাতি হাতে নিয়ে চলেছো,
পায়ে পা মিলিয়ে হাঁটছ রাস্তায়।

ব্যানার -এ লিখছো,
ওদের চরম শাস্তি চাই,
দিল্লী, মুম্বাই, কলকাতায়।।

আমি আর আজ নেই,
বছরের আগেই আমি শেষ,
সাধের ভারত থেকে দূর সিঙ্গাপুরে।

আমাকে প্রায় শেষ করে,
শরীরটাকে দলা পাকিয়ে,
ছুড়ে দিয়েছে রাস্তার ধারে।।

জীবনের অনেক সাধ ছিল,
স্বপ্ন ছিল আরো অনেক,
একটা সন্ধ্যেয় সব ধুলায়।

নতুন বছরে একটাই আশা,
একটাই অনুরোধ আমার,
আর যেন কেউ দামিনী না হয়।।

WISH YOU ALL A BETTER TOMORROW, SAFER AND NICER YEAR 2013........


Sunday, December 30, 2012

রক্তে ভেজা মাটি বা ফুটবলের গ্রাস

Dear All,
 
This poem was written on 15th July, 1994. This poem was influenced by the famous poem "চে তোমার মৃত্যু আমাকে অপরাধী করে দেয়" and by the death of Escobar. Andrés Escobar Saldarriaga (13 March 1967 – 2 July 1994), nicknamed "The Gentleman of Football", was a Colombian footballer who was shot and killed in Medellín. It is widely believed that he was murdered due to his own goal in the 1994 FIFA World Cup against United States, which supposedly would have caused gambling losses to several powerful drug lords. Andrés Escobar is still held in the highest regard by Colombian fans, and is especially mourned and remembered by Atlético Nacional's fans. His brother, Santiago, has managed many Colombian teams. Andrés is known for his famous line "Life doesn't end here".
 
রক্তে ভেজা মাটি বা ফুটবলের গ্রাস
 
এস্কোবার তোমার মৃত্যু আমাকে হতবাক করে দেয়,
        রেস্তোয়ার সামনে তোমার রক্তে ভেজা
                    মেডেলিনের মাটি -
আমার দুচোখ শুকাইয়া দেয়।
 
হার্কেসের ক্রস সেন্টারে তোমার
                একখানি আন্তঘাতী গোল
        তোমায় দুঃখ  দিয়েছে বিস্তর,
                -  কিন্তু -
শাস্তি দিয়েছে ঢের বেশী।
 
তোমায় কিছু দিতে পারেনি বলে,
        আক্ষেপ ছিল বুঝি -
                ফাটকাবাজদের।
 
তাই তারা তারা তোমার মৃত্যুরআগে  আগে দিয়ে গেল
        এক ডজন প্রাণঘাতী গুলি।
 
আজকের এই আধুনিক ফুটবলের যুগে,
    দুর্মুখঃ পেলেটার পছন্দের কলম্বিয়ার
    তুমি ছিলে এক "আনকোরা" ফুটবলার
    আমি ছিলাম এক "নামকরা" অবজারভার।
 
তুমি গেলে কি রইলে
    তাতে মোর নেই কোনো দরকার।
 
শুধু আমি বলব তারে,
আমার বড়ো শত্রু যেরে -
চল তোরে দিয়ে আসি ফুটবলের মাঠে।।
 
This was written by an Navneet Poet. Please let me know how do you like it by Group or Personal email. If you like some more Poems written by that person will be circulated and name will be disclosed if required.
 
Regards,
 
Partha

Saturday, December 29, 2012

যদি নির্বাসন দাও

যদি নির্বাসন দাও - সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
 
যদি নির্বাসন দাও, আমি ওষ্ঠে অঙ্গুরী ছোঁয়াবো
আমি বিষপান করে মরে যাবো ।
বিষন্ন আলোয় এই বাংলাদেশ
নদীর শিয়রে ঝুঁকে পড়া মেঘ
প্রান্তরে দিগন্ত নির্নিমেষ-
এ আমারই সাড়ে তিন হাত ভূমি
যদি নির্বাসন দাও, আমি ওষ্ঠে অঙ্গুরী ছোঁয়াবো
আমি বিষপান করে মরে যাবো ।

ধানক্ষেতে চাপ চাপ রক্ত
এইখানে ঝরেছিল মানুষের ঘাম
... এখনো স্নানের আগে কেউ কেউ করে থাকে নদীকে প্রণাম
এখনো নদীর বুকে
মোচার খোলায় ঘুরে
লুঠেরা, ফেরারী।
শহরে বন্দরে এত অগ্নি-বৃষ্টি
বৃষ্টিতে চিক্কণ তবু এক একটি অপরূপ ভোর,
বাজারে ক্রুরতা, গ্রামে রণহিংসা
বাতাবি লেবুর গাছে জোনাকির ঝিকমিক খেলা
বিশাল প্রাসাদে বসে কাপুরুষতার মেলা
বুলেট ও বিস্পোরণ
শঠ তঞ্চকের এত ছদ্মবেশ
রাত্রির শিশিরে কাঁপে ঘাস ফুল–
এ আমারই সাড়ে তিন হাত ভূমি
যদি নির্বাসন দাও, আমি ওষ্ঠে অঙ্গুরী ছোঁয়াবো
আমি বিষপান করে মরে যাবো ।

কুয়াশার মধ্যে এক শিশু যায় ভোরের ইস্কুলে
নিথর দীঘির পারে বসে আছে বক
আমি কি ভুলেছি সব
স্মৃতি, তুমি এত প্রতারক ?
আমি কি দেখিনি কোন মন্থর বিকেলে
শিমুল তুলার ওড়াওড়ি ?
মোষের ঘাড়ের মতো পরিশ্রমী মানুষের পাশে
শিউলি ফুলের মতো বালিকার হাসি
নিইনি কি খেজুর রসের ঘ্রাণ
শুনিনি কি দুপুরে চিলের
তীক্ষ্ণ স্বর?
বিষন্ন আলোয় এই বাংলাদেশ…
এ আমারই সাড়ে তিন হাত ভূমি
যদি নির্বাসন দাও, আমি ওষ্ঠে অঙ্গুরী ছোঁয়াবো
আমি বিষপান করে মরে যাবো… ।

Friday, December 28, 2012

Charyapada

Sharing a rare collection; named Charyapada, the collection of the oldest verses written in pre-Modern Bengali or Maithili. The language Maithili later transformed in various parts of the states of Kalinga and produced rich languages like Bengali (in the Delta of Ganges and Brahmaputra or Bengal); Oriya (in Costal Utkal or Orissa); Maithili, Angika, Bhojpuri and Magadhi (in western parts or Bihar) and Assamese (in North Eastern Region or Assam).

 

Written between 8th and 12th Century, this collection of mystical poems from the tantric tradition in Kalinga, original palm-leaf manuscript of the Charyapada, was discovered by Haraprasad Shastri at the Nepal Royal Court Library in 1907. This manuscript was edited by Shastri and published by the Bangiya Sahitya Parishad as a part of his Hajar Bacharer Purano Bangala Bhasay Bauddhagan O Doha (The Buddhist Songs and Couplets in a thousand years old Bengali Language) in 1916 under the name of Charyacharyavinishchayah.

 

For further details refer to www.banglapedia.org/HT/C_0144.HTM or http://en.wikipedia.org/wiki/Charyapada or several other sites.

 

Attaching a page from Original Manuscript and the ancient Odia script in Dohakosa used by Sarahapada:

 

 

 

Enjoy Charyapada in Maithili (using Bengali phonetic) and equivalent English translation…..

 

Amalkanti - অমলকান্তি

Since some of you requested to share the full script of this poem, I am forwarding it here. Enjoy both in Bengali and in English fonts.....
 
"Amalkanti" a loser, who wanted to become sunshine and............ failed.
 
সেই অমলকান্তি - নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী
অমলকান্তি আমার বন্ধু
ইস্কুলে একসঙ্গে পরতাম।
রোজ দেরী করে ক্লাসে আসত, পড়া পারত না,
শব্দরূপ জিগগেশ করলে,
এমন অবাক হয়ে জানালার দিকে তাকিয়ে থাকত যে,
দেখে ভারী কষ্ট হত আমাদের।
 
আমরা কেউ মাষ্টার হতে চেয়েছিলাম, কেউ ডাক্তার, কেউ উকিল,
অমলকান্তি সে সব কিছু হতে চায় নি।
সে রোদ্দুর হতে চেয়েছিল!
খান্তবর্ষণ কাক বিকেলের সেই লাজুক রোদ্দুর,
জামের পামফ্লেট পাতায়,
যা নাকি অল্প হাসির মতন লেগে থাকে।
আমরা কেউ মাস্টার হয়েছি, কেউ ডাক্তার, কেউ উকিল।
অমলকান্তি রোদ্দুর হতে পারে নি।
 
সে এখন অন্ধকার  একটা ছাপাখানায় কাজ করে।
মাঝে মাঝে আমার সঙ্গে দেখা করতে আসে,
চা খায়, ইটা ওটা গলপো করে, তারপর বলে "উঠি তাহলে"।
আমি ওকে দরজা পর্যন্ত্য এগিয়ে দিয়ে আসি।
 
আমাদের মধ্যে যে এখন মাস্টারি করে
অনায়াসে সে ডাক্তার হতে পারত,
যে ডাক্তার হতে চেয়েছিল,
উকিল হলে তার এমন কিছু ক্ষতি হত না।
অথচ সকলের ইচ্ছাপূরণ হলো, এক অমলকান্তি ছাড়া।
অমলকান্তি রোদ্দুর হতে পারেনি।
সেই অমলকান্তি, রোদ্দুরের কথা ভাবতে ভাবতে,
যে একদিন রোদ্দুর হতে চেয়েছিল।
 
Sei Amalkanti – Nirendronath Chakroborty
Amalkanti amar bondhu
Iskule eksonge portam.
Roj deri kore classey ashto,pora parto na,
Sobdorup jigesh korle
Emon obak hoye janalar dike takiye thakto je
Dekhe bhari kosto hoto amader.
 
Amra keu mastar hote cheyechilam,keu dactar,keu ukil
Amalkanti se sob kichhu hote chai ni.
Se roddur hote cheyechilo!
Khantoborshon kaak bikeler sei lajuk roddur,
Jaam ar pamphlet patae
Ja naki olpo hashir moton lege thake.
Amra keu mastar hoyechi,keu dactar,keu ukil.
Amalkanti roddur hote pare ni.
Se ekhon ondhyokar ekta chapakhanae kaaj kore.
Majhe-majhe amar songe dekha korte ashe,
Cha khae,eta ota golpo kore,tarpor bole "uthi tahole".
Ami oke dorja pronto egiye diye ashi.
 
Amader modhye je ekhon mastari kore
Onayashe se dactar hote parto,
Je dactar hote cheyechilo,
Ukil hole taar emon kichhu khoti hoto na.
Othocho sokoler echhapuron holo,ek Amalkanti chara.
Amalkanti roddur hote pareni.
Sei Amalkanti,roddurer kotha bhabte-bhabte
Je ekdin roddur hote cheyechilo

Tuesday, December 25, 2012

আ মরি বাংলা ভাষা ৩ নং ... A mori bangla bhasa #3

আজ আগে মেদিনীপুর, তারপর পুরুলিয়ার রঘুনাথপুর।
 
তখন আমি খুব ছোট, কাঁথিতে থাকতাম | মেদিনীপুরের চলিত ভাষায় 'র' কে 'অ' বলে | পাশের বাড়িতে একজনের শরীর খারাপ, হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে | রক্ত দরকার ছিল কিন্তূ রাতের বেলায় পাওয়া যায়নি, পরদিন যোগাড়  হবে | বাড়ির লোক ফিরে এসে জানতে চাইলে বললো "আঁতের বেলায় অক্ত নাই।"
 
একটা ছোটো অনুষ্ঠান হচ্ছে | একটি বালিকা কবিতা পাঠ করছে "পাখি সব, কঅে অব, আঁতি পোহাইল".................. আরো ছিল 'অবীন্দ্র'-জয়ন্তীতে 'অবীন্দ্রনাথ'-এর কবিতা, 'আস'মেলা | 
 
...................................................................................................
 
আজ শেষ করব পুরুলিয়ার রঘুনাথপুরের একটা ছোট্ট গল্প দিয়ে | আমি নবম থেকে একাদশ শ্রেণী পড়েছিলাম একটা স্কুল-এ যার নাম ছিল রঘুনাথপুর গোবিন্দ দাস লঙ হাই স্কুল (Raghunathpur G. D. Lang High School) | আমার বন্ধুদের অনেকেই অনেক দূর থেকে পড়তে আসত | আদ্রা, জয়চন্ডিপুর, আড়া, আনাড়া অনেক জায়গা থেকে। অনেকেই ছিল খুব গরিব আদিবাসী সম্প্রদায়ের | আমার তেমন দুই বন্ধু ছিলো হেমব্রম আর মুর্মু। দুজনেই সাঁওতালডিহি থেকে আর স্কুল-এর কাছেই একটা হোস্টেল-এ থাকত |
 
পরিমল হেমব্রম-এর বাবা একদিন এসেছে ছেলের কাছে। দিনমজুরি করেন আর কিছু জমি আছে বছরে একবার ধান হয় আর বাকি সময় কিছু রবিশস্য | রঘুনাথপুর এখনো একটা ছোট্ট মফস্বলের শহর, তবু গ্রামের মানুষের কাছে সেটাই বিশাল ব্যাপার |
 
তিনি সারাদিন ছেলের সাথে রঘুনাথপুর শহর ঘুরে জয়্চন্ডি পাহাড়, যেখানে হীরক রাজার দেশের শুটিং হয়েছিল সেই পুকুর, গুহা, মুনসেফডাঙার সরকারী অফিস, বাংলো, দমনসায়র, নাড়ার বাঁধ এইসব দেখে চমকিত, পুলকিত, বিস্মিত। কিন্তূ সারাদিন ঘুরে এসে ছেলে যখন নিজের বাসায় এসে ছোট্ট একটা কালো বোতাম (আগেকার গোলাকৃতি সাদা কালো ইলেকট্রিক সুইচ) টিপে একটা বেগুনের মত দেখতে আলো (সাধারণ বাল্ব) জ্বালিয়ে দিলো তখন ওনার মুখটা যে হাঁ হলো সেটা বন্ধ্য হলো  সাঁওতালডিহিতে নিজের বাড়ি ফিরে গিয়ে।
 
গিন্নি জানতে চাওয়ায় সেদিন অভিজ্ঞতা, বিশেষত সন্ধ্যের সেই বৈদুতিক আলো জ্বালানোর ঘটনার বিবরণ দিলেন "বটেব বটে রঘুনাথপুর সোহোর। হা ভাললি বাবা। পোলাটো ঘরটায় সামাইল আর টুকচুন বোতোমতো টিপলেক। আর বাইগোনো বাতিটা বিজলাই গেলা।"

আ মরি বাংলা ভাষা ২ নং ... A mori bangla bhasa #2

আজকে আমার নিজের জেলা বর্ধমান। একটু ভাষা আর একটা মন খারাপ করা কাহিনি।
 
সেটা ১৯৮৩ সাল। আমার তখন ৭ বছর। মঙ্গলকোটে সদ্য বদলি হয়ে এসেছি। বাবা এসেই অফিসের দায়িত্ব বুঝে নিতে গেছেন। নতুন কোয়ার্টারে এসে কিছুদিন লাগত ঘরের মালপত্র ঠিকঠাক করতে। তখনো ছিলো তোলা উনুন। তখনকার কাজের মাসির বেশ গরিব ছিল তবে খুব বেশি হলে ২-৩ টে বাড়ির কাজ করতো, সময় নিয়ে। এখনকার মতো ১০-১৫ মিনিটের ঝড় তুলে বেরিয়ে যেত না।  প্রথম দিন কাজের মাসি এগিয়ে এলো উনুন ধরিয়ে দেবার জন্যে যাতে মা একটু অন্য কাজে সময় পায়। কেরোসিন দিয়ে ঘুঁটে জ্বেলে তার সাহায্যে কয়লার উনুন জ্বালানো ছিলো একটা বেশ ঝকমারি কাজ, যেটা মা, মাসিরা খুব সহজেই করতেন।
 
আমি আর আমার বোন তখন নতুন কোয়ার্টারের সব জায়গা দেখে নিতে ব্যস্ত। কিছু পরে সব ঠিকঠাক করে কাজের মাসি আমাকে বললো, "বাবু টানাকাঠি হবে"? আমি শুধালাম - "টানাকাঠি কি জিনিস মাসি"?
 
মাসি হেসে বললো "তাও জানো না। ওই যে একটা রঙিন বাকসোর মধ্যে অনেকগুলো কাঠি থাকে। বাকসের গায়ে ঘষলে জ্বলে উঠে। মাকে বোলো ঠিক জানে।" আমি ভাবলাম বাঃ বেশ মজার জিনিস তো। নিশ্চয় কোনো দারুন আতসবাজি হবে। তখন এত আতসবাজি বাজারে পাওয়া যেত না, আমরা কালিপূজার আগে বাড়িতে তুবড়ি তৈরী করতাম। দারুন মজা হত। আমি এটাও জানলাম এক বাক্সের দাম ৫ পয়সা। কিন্তূ আমি জানিনা এটা মানা যায় না। আমি জানি না আর মা জানবে এমন কোনো আতসবাজি হয় নাকি।
 
তাই মায়ের কাছে দরকারটা না বলে ১০ পয়সা চেয়ে এনে দিলাম আর বললাম "তোমাকে মা দুই বাক্স টানাকাঠি এনে দিতে বলেছে।" মাসি অবাক হলেও টীনাকাঠি আনতে চলে গেল। এখনকার মত তখন ২ মিনিট গেলেই দোকান পাওয়া যেত না। বেশ কিছু পরে যখন টানাকাঠি এনে হাজির তখন মায়ের মুখোমুখি। কথা শুনে বুঝলাম "টানাকাঠি" হলো দেশলাই কাঠি। শুধুশুধু কাজের দেরী করিয়ে দেওয়ার জন্যে মায়ের কাছে বেশ বকুনি খেলাম।
..................
..................
..................
মঙ্গলকোট ছিল অজয় নদ আর কোণার নদীর সংযোগস্থলে। পল্লীকবি কুমূদরঞ্জন মল্লিকের বাড়ি। যিনি লিখেছিলেন "বাড়ি আমার ভাঙ্গন ধরা অজয় নদীর বাঁকে।" আমরা ওখানে ছিলাম ৩ বছর। বর্ষাকালে নদী ভরলেই ভয় হত। কোয়ার্টারের বারান্দা থেকে দেখতাম আস্তে আস্তে নদীর জল কিভাবে রাস্তা পেরিয়ে, বাঁধ ভেঙ্গে চলে আসছে গোটা শহরে। চারিদিকে তখন "জল শুধু জল, দেখে দেখে চিত্ত মোর হয়েছে বিফল অবস্থা।"
 
আমাদের কোয়ার্টারটা জলের মাঝে আর কিছু বাড়ির মত একটা দ্বীপের মতো জেগে থাকত। সরকারী অফিস বলে আশেপাশের গ্রামের লোক মালপত্র, গরু, ছাগল নিয়ে এসে হাজির হত। বাবা পিওন আর নাইটগার্ডদের সাথে নিয়ে অফিসের ফাইলগুলো দোতলার ঘরে নিয়ে এসে নিচের অফিস আর দোতলার একটা ঘর খুলে দিত। তাতেও হত না, লোকজন ত্রিপল নিয়ে ছাদেও উঠে যেত। ২-৩ দিন বন্যার জল থাকত। মা সাধ্যমতো হাতে তৈরি রুটি, মুড়ি, গুড় আর ছোলাভাজা সাপ্লাই দিত।
 
এই রকম একদিনে, দুপুর বেলায় কাজের মাসি আমাদের বাড়িতে কাজ করছে, হঠাত বান এলো। মাসি আটকে পড়ল। বাড়ি যেতে পারছে না, কিন্তূ বাড়ির দিকেই মন। আমরা খাব, তাই বাবা বললো মাসিকেও কিছু খেয়ে নিতে। খেতে দিতে মাসি বলে উঠলো "এখানে তো আছি দাছি খাছি বাবু, বাড়িতে কি হছে দেছে বুঝতে লারছি।"
 
জল নামতে মাসি বাড়ি চলে গিয়েছিল। তারপর আর আসে নি। পরে জেনেছিলাম মাসির এক ছেলে আর এক মেয়ে স্কুলে ছিল। কিন্তূ তৃতীয়জন তখন তিন বছরের সে ঘরে ছিল, মাসির বর কাছেই একটা দোকানে গিয়েছিল। ঢেউ কমতেই বাড়ি পৌছে গেলেও তাকে আর খুঁজে পাওয়া যায়নি।
 
ব্যর্থ আশা বুকে নিয়ে, মাসি বাড়ি গিয়ে কোলের মেয়েটিকে খুঁজতে খুঁজতে যেখানে কোণার এসে মিশেছে অজয়ের সাথে সেখানে চলে গিয়েছিল। হঠাত একটা পাড় ভেঙ্গে পরে। গ্রামের লোকেরা শব্দ শুনেছিল, কিন্তূ ওখানে পৌছে কাউকে দেখতে পায় নি। শুধু মা আর মেয়েকে গ্রাস করে দুর্বার গতিতে ছুটে চলেছে অজয়ের খরস্রোত।

আ মরি বাংলা ভাষা ... A mori bangla bhasa

শুরু করছি একটা ছোটো প্রয়াস। পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জায়গায় বাংলা ভাষা বিভিন্ন রকম। আজ শোনাব একটা ছোটো গলপো। পুরুলিয়ার এক গ্রামের জমিদার ছেলের বিয়ে হবে কলকাতায়। এখনো পশ্চিমবঙ্গের অনেক জায়গায় ব্ল্যাক আউটের নিয়ম মেনে সন্ধ্যের মধ্যে গ্রামের সব আলো নিভিয়ে দেওয়া হয়। পিতৃদেবের গুরুঠাকুর এলেও কেউ দরজা খুলবে না। জমিদার বরযাত্রী আর বর নিয়ে বিকেল বিকেল দুরের রেলস্টেশনে চলে এলেন। ট্রেন ভোর বেলায়। গ্রামের লোকেরা ট্রেন দেখেনি। খুব আগ্রহ। খোজ নিয়ে জানা গেলো গোমো প্যাসেঞ্জার পাস করবে রাতের দিকে তবে দাড়াবে না। ট্রেনের খবর হলে উঠিয়ে দেবেন বলে জমিদার সবাইকে ঘুমিয়ে পড়তে বললেন। সবাই মুড়ির সাথে ছোলা মটোর ভাজা খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ল।

সময় হলে টুংটাং শব্দে সবাই উঠে প্লাটফর্মে দাড়িয়ে পড়ল। ট্রেন এলো, একটু ধোঁয়া বার করে কু ঝিকঝিক করে চলে গেল। জমিদার ট্রেন দেখে অবাক। কপালে হাত ঠেকিয়ে নমস্কার করে বললেন, "বটেব বটে ইঞ্জিন ঠাকুর। হা ভাল্লি বাবা। টুকচুন ছিলিমটো সুলগালেক আর গোটা লাটফরমটা ধোকোপোকো ধোকোপোকো দনদনাইয়া চলি গেলা।"
 
কেউ আর ঘুমায় না। সেই অদ্ভুত ট্রেন নিয়ে গল্পো চললো। ভোরের ট্রেনে করে সবাই কলকাতায় এলেন। কন্যাপক্ষ তাড়াতাড়ি এসে বরপক্ষকে অনুরোধ করে বললো, "আসুন আসুন, বাইরে অনেকগুলো মোটড়  রেডি আছে আপনাদের জন্যে"। জমিদার ভাবলেন শহরের লোকেরা ফাজলামি করছে। সকালে মোটর দিয়ে মুড়ি খাব নাকি। এসব ভেবে হটাত খেপে গিয়ে বললেন "কতোগুলো মটোর আছে আপনাদের?" উত্তর পেলেন তা বেশ কিছু।
 
জমিদার হাঁক পারলেন দলের অশোক বলে একটি ছেলেকে "ওরে ওশকা, নিয়ে আয় তো ঝোলাটা।" অশোক নিয়ে এলে উনি ঝোলা খুলে সব মটোরভাজা ছড়িয়ে দিলেন প্লাটফর্মে, বললেন "ভালুন কোতো মটোর আছে। মিউনিসিপালিটি থেকে কাড়ার ভ্যান লইয়া আসেন আমার পোলাপানের  লগে।" অতঃপর  মেয়ের বাড়ি থেকে কি করেছিল জানা নেই। কেউ জানলে বলবেন।

অর্থ: বটেব বটে - ওরে বাবা; ভাল্লি - দেখলাম; টুকচুন - একটুকু;  ছিলিমটো - ধোঁয়াটা;  সুলগালেক -  বার করল; লাটফরমটা - প্লাটফর্ম; ধোকোপোকো ধোকোপোকো দনদনাইয়া - ধুকপুক ধুকপুক শব্দে কাঁপিয়ে; ওশকা - আশোক; কাড়ার ভ্যান - মোষের গাড়ি;  পোলাপানেরছেলের।
 
(Screenshot attached if the Bengali font is not coming properly in your screen)

শীত

 
আরও শীত চুঁয়ে পড়ুক গাছের পাতার তলায়,
আরও শীত ছড়িয়ে যাক তোর কথা বলায়,
আরও শীত বাক্স বন্দি কিছু ইচ্ছে আছে,
আরও শীত লেপ তোষক মোড়া আমার কাছে...
- by Susmit Chandra