Monday, February 6, 2017

নোট-বন্দী নিয়ে অমিতাভ প্রামানিকের লেখা

https://www.facebook.com/amitava.pramanik.1?fref=nf on 17th November 2016

জিনিসগুলোকে সহজ সরল চোখে দেখুন, তাহলে খানিকটা বোঝা যাবে।
এক - টাকা বাতিল পুরো রাজনীতির খেলা। ইউ পি ইলেকশনে জেতার জন্যেই বিজেপি এই কুকর্মটি করেছে।
উত্তর - হতেই পারে। যেহেতু ব্যাপারটা ইউ পি ইলেকশনের আগে, তাই এই সন্দেহ অমূলক নয়। তবে ভারতে এখন গোটা তিরিশ রাজ্য, কতগুলো কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল। ইলেকশন তো লেগেই থাকে একটা না একটা। ইউ পি ইলেকশন পেরিয়ে গেলে বলা যেতে পারত, পন্ডিচেরি ইলেকশনে জেতার জন্যে, সেটা পেরোলে আন্দামান-নিকোবরের ইলেকশন জেতার জন্যে।
ইলেকশনে প্রচুর টাকা খাটে, অধিকাংশই কালো টাকা। এখন কারো কাছেই টাকা নেই। সুতরাং বিজেপি বিশেষ সুবিধে পেয়ে যাবে কীভাবে, সেটা বোঝা যাচ্ছে না।
দুই - রাঘব বোয়াল সব বেরিয়ে যাবে এটা ওটা করে, চুনোপুঁটি কিছু সমস্যায় পড়বে যাদের অনেক ক্যাশ টাকা আছে।
উত্তর - কিছু না করার চেয়ে কি সেটা ভাল না? রাঘব বোয়াল সব বেরিয়ে যাবে, এই ধারণারই বা ভিত্তি কী? যাদের কাছে প্রচুর কালো ক্যাশ টাকা আছে, তারা সবাই সমস্যায় পড়েছে। এদের কেউ কেউ দু'নম্বরী উপায় খুঁজছে বেরোনোর। কিছু তো সব সময়েই বেরিয়ে যায়। কেউ ধরা না পড়ার চেয়ে কিছু ধরা পড়া কেন খারাপ?
তিন - বিজেপি সব জানত। সেইজন্যেই তো ঘোষণার দিনই এক কোটি টাকার বেশি ওরা কলকাতার এক ব্র্যাঞ্চে জমা করেছে।
উত্তর - ব্যাঙ্কে টাকা জমা করলে সেটা কালো টাকা কী করে হয়? কালো টাকা ব্যাঙ্কে থাকে না। যারা কালো টাকা জমাতে চায়, তারা কখনোই ব্যাঙ্কে রাখে না। রাখলে সেটার হিসাব দাখিল করতে হয়, প্রাপ্য কর দিতে হয় তার ওপর। রাজনৈতিক দল টাকা ব্যাঙ্কে রাখে না বলেই তো সমস্যা।
ধরে নেওয়া গেল, বিজেপি জানত, অন্য দলগুলো জানত না। তারা এখন ফাঁপরে পড়েছে। গত ইলেকশনে বিজেপি ৩৩% ভোট পেয়েছিল। যারা ভোট দিয়েছিল, ধরে নেওয়া গেল, সবাই বিজেপির শীর্ষস্থানীয় নেতা। তার মানে দেশে টু-থার্ড অন্য পার্টি, এবং তাদের মধ্যে ব্যাপক কালোবাজারি আছে। কেননা ঐ ৩৩% তো জানত মোদির ঘোষণার কথা, তাই তারা সব কালো টাকা সাদা করে ফেলেছে। বাকি ৬৭% যেহেতু জানত না, তাদের কালো টাকাই যদি শুধু ধরা পড়ে, তার পরিমাণও তাহলে মন্দ হবে না। ৬৭% তো কম নয় একশো তিরিশ কোটির দেশে।
চার - জনগণের যে প্রবল সমস্যা হচ্ছে, তার তুলনায় কালো টাকা উদ্ধার কিস্যু হবে না। সব লোক দেখানো।
উত্তর - ধরে নেওয়া গেল, তাই ঠিক। আপনার কাছে যেহেতু কালো টাকা নেই, তা উদ্ধার হলেই বা আপনার কী, না হলেই বা কী? জনগণের কথা থাক, আপনি আপনার সমস্যা হলেই প্রতিবাদ করুন। গৌরবে বহুবচনের দরকার নেই। প্রত্যেকটি অসুবিধাই অসুবিধা, এবং সরকারকে তার জবাবদিহি করতে হবে। পরের ইলেকশনেই এর বিরুদ্ধে ভোট দিন। সম্ভব হলে তার আগেই।
আশা করা যায়, কালোবাজারিদের ভোট দেবেন না তার বদলে।

Amitava Pramanik
মনে করুন আপনার কাছে এক কোটি টাকা ক্যাশ আছে, যেটা ব্ল্যাক মানি। আর দশ লাখ টাকা ব্যাঙ্কে আছে হোয়াইট মানি। আপনি ধুরন্ধর লোক, জানেন ব্ল্যাক মানি ঘরে রাখা ঠিক না, কবে মোদি ওই টাকা কাগজ করে দেবে, সুতরাং ঐ টাকা দিয়ে জমি কিনে ফেলা যাক।
জমি খুঁজে বের করলেন। আপনি যেহেতু করিৎকর্মা, অর্থাৎ এত টাকা ব্ল্যাকমানি জমিয়েছেন, জমির ব্যাপারেও ঘাঁৎঘোঁৎ বুঝে নিয়েছেন। জানেন যে চাষের জমি কিনে একে ওকে ঘুষটুষ দিয়ে ওটা রেসিডেন্সিয়াল বানিয়ে ফেলতে পারলে এক কোটিটা পাঁচ কোটি হয়ে যাবে।
সে যাই হোক, জমি কিনলেন। যার কাছ থেকে কিনলেন, তাকে বললেন, আপনার কাছে হোয়াইট আছে দশ লাখ, ওটাই জমির দাম সরকারকে দেখানো হবে, কিন্তু আপনি ওকে দেবেন এক কোটি দশ লাখ, ঐ এক কোটি ক্যাশে। এতে আপনার ব্ল্যাক মানি বেরিয়ে হোয়াইট জমি হয়ে গেল, তাই না?
সবাই চেঁচিয়ে গলা ফাটিয়ে এই যুক্তিই দেখাচ্ছে না? যে ব্ল্যাক মানি কি আর ব্ল্যাক আছে, কবে সব সোনাদানা, জমিজিরেত হয়ে গেছে!
আচ্ছা, যে লোকটা জমিটা বিক্রি করল, তার কাছে যে এককোটি টাকাটা ক্যাশে গেল, সেটা ব্ল্যাক না?
সেই উদো যখন একই পদ্ধতিতে ওটা হোয়াইট করতে যাবে, এই ব্ল্যাকটা তখন অন্য এক বুধোর ঘাড়ে জমা হবে না?
তাহলে বাজারে ব্ল্যাক মানির পরিমাণ কতটা কমল?

No comments:

Post a Comment

Note: Only a member of this blog may post a comment.