Monday, February 6, 2017

নোট-বন্দী নিয়ে অমিতাভ প্রামানিকের লেখা

https://www.facebook.com/amitava.pramanik.1?fref=nf on 17th November 2016

জিনিসগুলোকে সহজ সরল চোখে দেখুন, তাহলে খানিকটা বোঝা যাবে।
এক - টাকা বাতিল পুরো রাজনীতির খেলা। ইউ পি ইলেকশনে জেতার জন্যেই বিজেপি এই কুকর্মটি করেছে।
উত্তর - হতেই পারে। যেহেতু ব্যাপারটা ইউ পি ইলেকশনের আগে, তাই এই সন্দেহ অমূলক নয়। তবে ভারতে এখন গোটা তিরিশ রাজ্য, কতগুলো কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল। ইলেকশন তো লেগেই থাকে একটা না একটা। ইউ পি ইলেকশন পেরিয়ে গেলে বলা যেতে পারত, পন্ডিচেরি ইলেকশনে জেতার জন্যে, সেটা পেরোলে আন্দামান-নিকোবরের ইলেকশন জেতার জন্যে।
ইলেকশনে প্রচুর টাকা খাটে, অধিকাংশই কালো টাকা। এখন কারো কাছেই টাকা নেই। সুতরাং বিজেপি বিশেষ সুবিধে পেয়ে যাবে কীভাবে, সেটা বোঝা যাচ্ছে না।
দুই - রাঘব বোয়াল সব বেরিয়ে যাবে এটা ওটা করে, চুনোপুঁটি কিছু সমস্যায় পড়বে যাদের অনেক ক্যাশ টাকা আছে।
উত্তর - কিছু না করার চেয়ে কি সেটা ভাল না? রাঘব বোয়াল সব বেরিয়ে যাবে, এই ধারণারই বা ভিত্তি কী? যাদের কাছে প্রচুর কালো ক্যাশ টাকা আছে, তারা সবাই সমস্যায় পড়েছে। এদের কেউ কেউ দু'নম্বরী উপায় খুঁজছে বেরোনোর। কিছু তো সব সময়েই বেরিয়ে যায়। কেউ ধরা না পড়ার চেয়ে কিছু ধরা পড়া কেন খারাপ?
তিন - বিজেপি সব জানত। সেইজন্যেই তো ঘোষণার দিনই এক কোটি টাকার বেশি ওরা কলকাতার এক ব্র্যাঞ্চে জমা করেছে।
উত্তর - ব্যাঙ্কে টাকা জমা করলে সেটা কালো টাকা কী করে হয়? কালো টাকা ব্যাঙ্কে থাকে না। যারা কালো টাকা জমাতে চায়, তারা কখনোই ব্যাঙ্কে রাখে না। রাখলে সেটার হিসাব দাখিল করতে হয়, প্রাপ্য কর দিতে হয় তার ওপর। রাজনৈতিক দল টাকা ব্যাঙ্কে রাখে না বলেই তো সমস্যা।
ধরে নেওয়া গেল, বিজেপি জানত, অন্য দলগুলো জানত না। তারা এখন ফাঁপরে পড়েছে। গত ইলেকশনে বিজেপি ৩৩% ভোট পেয়েছিল। যারা ভোট দিয়েছিল, ধরে নেওয়া গেল, সবাই বিজেপির শীর্ষস্থানীয় নেতা। তার মানে দেশে টু-থার্ড অন্য পার্টি, এবং তাদের মধ্যে ব্যাপক কালোবাজারি আছে। কেননা ঐ ৩৩% তো জানত মোদির ঘোষণার কথা, তাই তারা সব কালো টাকা সাদা করে ফেলেছে। বাকি ৬৭% যেহেতু জানত না, তাদের কালো টাকাই যদি শুধু ধরা পড়ে, তার পরিমাণও তাহলে মন্দ হবে না। ৬৭% তো কম নয় একশো তিরিশ কোটির দেশে।
চার - জনগণের যে প্রবল সমস্যা হচ্ছে, তার তুলনায় কালো টাকা উদ্ধার কিস্যু হবে না। সব লোক দেখানো।
উত্তর - ধরে নেওয়া গেল, তাই ঠিক। আপনার কাছে যেহেতু কালো টাকা নেই, তা উদ্ধার হলেই বা আপনার কী, না হলেই বা কী? জনগণের কথা থাক, আপনি আপনার সমস্যা হলেই প্রতিবাদ করুন। গৌরবে বহুবচনের দরকার নেই। প্রত্যেকটি অসুবিধাই অসুবিধা, এবং সরকারকে তার জবাবদিহি করতে হবে। পরের ইলেকশনেই এর বিরুদ্ধে ভোট দিন। সম্ভব হলে তার আগেই।
আশা করা যায়, কালোবাজারিদের ভোট দেবেন না তার বদলে।

Amitava Pramanik
মনে করুন আপনার কাছে এক কোটি টাকা ক্যাশ আছে, যেটা ব্ল্যাক মানি। আর দশ লাখ টাকা ব্যাঙ্কে আছে হোয়াইট মানি। আপনি ধুরন্ধর লোক, জানেন ব্ল্যাক মানি ঘরে রাখা ঠিক না, কবে মোদি ওই টাকা কাগজ করে দেবে, সুতরাং ঐ টাকা দিয়ে জমি কিনে ফেলা যাক।
জমি খুঁজে বের করলেন। আপনি যেহেতু করিৎকর্মা, অর্থাৎ এত টাকা ব্ল্যাকমানি জমিয়েছেন, জমির ব্যাপারেও ঘাঁৎঘোঁৎ বুঝে নিয়েছেন। জানেন যে চাষের জমি কিনে একে ওকে ঘুষটুষ দিয়ে ওটা রেসিডেন্সিয়াল বানিয়ে ফেলতে পারলে এক কোটিটা পাঁচ কোটি হয়ে যাবে।
সে যাই হোক, জমি কিনলেন। যার কাছ থেকে কিনলেন, তাকে বললেন, আপনার কাছে হোয়াইট আছে দশ লাখ, ওটাই জমির দাম সরকারকে দেখানো হবে, কিন্তু আপনি ওকে দেবেন এক কোটি দশ লাখ, ঐ এক কোটি ক্যাশে। এতে আপনার ব্ল্যাক মানি বেরিয়ে হোয়াইট জমি হয়ে গেল, তাই না?
সবাই চেঁচিয়ে গলা ফাটিয়ে এই যুক্তিই দেখাচ্ছে না? যে ব্ল্যাক মানি কি আর ব্ল্যাক আছে, কবে সব সোনাদানা, জমিজিরেত হয়ে গেছে!
আচ্ছা, যে লোকটা জমিটা বিক্রি করল, তার কাছে যে এককোটি টাকাটা ক্যাশে গেল, সেটা ব্ল্যাক না?
সেই উদো যখন একই পদ্ধতিতে ওটা হোয়াইট করতে যাবে, এই ব্ল্যাকটা তখন অন্য এক বুধোর ঘাড়ে জমা হবে না?
তাহলে বাজারে ব্ল্যাক মানির পরিমাণ কতটা কমল?

অসিক্কিত (সংগৃহিত)


ভেরি স্যাড.........। কখন ঘটলো?... খুব দুঃখী দুঃখী ভাব নিয়ে প্রশ্নটা ছুঁড়ে দিলেন বোস বাবু। বোস বাবু এই "শুভ-নীড় " আবাসনের এসোসিয়েশন এর প্রেসিডেন্ট। খবরটা পেয়ে সকালে সুবিমলের ফ্ল্যাটে এসেছেন।
-- এই রাত ১২ টা নাগাদ...। দুজনে ঘুমিয়ে ছিলাম...... হঠাৎ বললো, বুকে ব্যথা। এম্বুলেন্সে ফোন করলাম... গাড়িটা আসতে এতো দেরী করলো......নিয়ে যেতে যেতেই সব শেষ...। স্ত্রী অপর্ণার মৃত দেহের দিকে অপলক তাকিয়ে থাকতে থাকতে বললেন বৃদ্ধ সুবিমল। সুবিমল আগে একটি স্কুলে শিক্ষকতা করতেন। এখন রিটায়ার্ড। প্রায় ১০ বছর হলো পুরানো বাড়ি ছেড়ে স্ত্রী অপর্ণা কে নিয়ে এই "শুভ-নীড়" এ বসবাস শুরু করেছেন। আগে একটি পুরানো বাড়িতে থাকতেন একমাত্র পুত্র শুভজিৎ কে নিয়ে। শুভজিৎ চাকরি পেয়ে আমেরিকায় সেটলড হবার পর থেকেই একাকীত্ব কাটাতে স্ত্রী কে নিয়ে চলে আসেন এই "শুভ-নীড় " এ। নামটা ছেলের সঙ্গে মিল থাকায় অপর্ণার পছন্দেই এখানে ফ্ল্যাট নেওয়া।
--কই পাশের ফ্ল্যাটেই থাকি অথচ কিছু বুঝতে পারিনি তো ! বললেন বোস বাবু। পাশ থেকে মিসেস বোস কনুই এর খোঁচা দিয়ে ফিসফিস করে বললেন, আরে ঐ যে রাতে যখন চেঁচামেচি হচ্ছিল.... তোমাকে বললাম না ? তুমি তো টিভিতে তোমার শেয়ার মার্কেটের চ্যানেলে ডুবে ছিলে!
একে একে আশপাশের ফ্ল্যাট থেকেও কয়েকজন এসেছেন সমবেদনা জানাতে। সকলের একই জিজ্ঞাসা.. শুভ কখন আসছে? সুবিমল পাশের ঘরে গিয়ে শুভকে ফোন করলেন, রাতেও একবার করেছিলেন..।
--হ্যাঁ...শুভ...তুই তাহলে কখন...
--বাপি, এখানে অনেক কাজ পেন্ডিং ; সবকিছু গুছিয়ে যেতে যেতে দিন পাঁচেক লাগবে ! তুমি এক কাজ করো, মাকে.......
ফোন টা কেটে দিলেন সুবিমল। মনে পড়ে গেল পুরানো দিনের কথা...ছেলে স্কুল থেকে বাড়ি ফিরে না খাওয়া পর্যন্ত অপর্ণা দুপুরের খাবার মুখে তুলতো না, ছেলে রাত জেগে পড়াশোনা করলে মা ও জেগে বসে থাকতো ছেলের বায়নায়...। অপর্ণার জোরাজুরিতেই গ্রামের ভিটে মাটি সব বেচে দিয়েছিলেন যাতে শুভ প্রতিষ্ঠিত হতে পারে ! বছর দুয়েক আগে একবার শুভ এখানে এসেছিল স্ত্রী-পুত্র কে সঙ্গে নিয়ে.... পুরানো বাড়িটা বিক্রির ব্যাপার ফাইনাল করতে......।
শুভ কী বললো স্যার?..... অজিতের প্রশ্নে সুবিমল চকিতে ফিরে এলেন স্মৃতির পাতা থেকে...। অজিত "শুভ-নীড়" এর পাশেই রাস্তার ধারে একটা চা এর দোকান চালান। রাতে রুটিও বিক্রি করেন। সকালের চা আর রাতের রুটি টা সুবিমলের ফ্ল্যাটে এসে নিজে রোজ দিয়ে যান, যাতে বৃদ্ধ- বৃদ্ধার অসুবিধা না হয়। মাঝে মাঝেই বলতেন... বাবা আম্রিকা.....!! ছেলেকে মানুষ করেছেন বটে.... আম্রিকায় চাকরি পাওয়া মুকের কথা...!! ... আমরা অসিক্কিতই থেকে গেলুম...। স্যার যদি আমাদের ও একটু সিক্কে দিতেন তাইলে আর এই চা বেচতে হতো নি......
--শুভর এখন আসার সময় নেই রে অজিত, অনেক কাজ তো...! আর কারো জন্য অপেক্ষা করবো না.....চোয়াল শক্ত করে বললেন সুবিমল।

তা হলে আমি আসি সুবিমল দা...আমার আবার আজ অফিসের ইম্পর্ট্যান্ট একটা মিটিং আছে... বললেন বোস বাবু। আমাকেও আজ একটু তাড়াতাড়ি বেরোতে হবে, জোনাল ম্যানেজার আসবেন...
রিভিউ রিপোর্ট প্রেজেন্টেশন আছে.... বললেন উপরের ফ্ল্যাট 3B এর মি. দাস...। একে একে সবাই বিদায় নিলেন। ঘরের মধ্যে সুবিমল, অজিত আর অপর্নার শায়িত নিষ্প্রাণ দেহ.....। অজিত নিস্তব্ধতা ভেঙে বললেন.... স্যার কিচ্ছু চিন্তা করবেন নে। আমরাই শ্মশানে নিয়ে যাবার ব্যাবস্থা করতেছি.....
কিছুক্ষণ পর অজিত ৮-১০ জনকে নিয়ে উপস্থিত হলেন। কেউ মুদিখানার দোকান চালান, তো কারো জামা কাপড় ইস্ত্রির দোকান ৷ সকলেই তাদের দোকানপাট বন্ধ করে এসেছেন.... সঙ্গে দেহ সৎকারের সমস্ত উপকরণ .......
********
গনগনে চুল্লির মধ্যে অপর্ণার দেহটা ঢুকে গেছে...। একটা কোনে চুপ করে বসে চুল্লির দিকে অপলক তাকিয়ে আছেন সুবিমল। অপর্ণার কি খুব কষ্ট হচ্ছে.... না কি বৃদ্ধ বয়সে সন্তান কে ছেড়ে থাকার একাকীত্বর যন্ত্রণা থেকে মুক্তির আনন্দ.......? চোখের কোন থেকে জলের ধারা নেমে আসে সুবিমলের, চশমাটা ঝাপসা হয়ে যায়......।
দূর থেকে সুবিমলের চোখের জল দেখে কাছে আসে অজিতI স্যার নিজেকে শক্ত করুন...সবাই কেই তো একদিন যেতে হবে...! আমরা তো আছি...আর কী বলবো... আমাদের মতো অসিক্কিত দের কি আর অতো জ্ঞানগম্যি আছে.....?
এবার বাঁধ ভাঙলো সুবিমলের৷ অজিত কে জড়িয়ে ধরে হাউ হাউ করে কাঁদতে থাকলেন..... । কাঁদতে কাঁদতে বললেন... ভাগ্যিস তোরা "শিক্ষিত" হসনি...! তোদের মতো "অশিক্ষিত " রা না থাকলে সমাজ টা তো থমকে যেত রে....!!
https://www.facebook.com/pproy76/posts/10212263813457469

ট্রেন এর দেয়ালে একটি নষ্ট মেয়ের ফোন নম্বর (Collected)

সকাল সাড়ে নটার শান্তিপুর লোকাল এ দাঁড়িয়ে আছি, ঠাসাঠাসি ভীড়। ট্রেন এমনিতেই লেট করে চলছে। আমরা রোজ কল্যাণী লোকালে যাই, আজ ট্রেন লেট বলে শান্তিপুর ধরলাম। আমাদের একটা গ্রূপ আছে। আমি , সুদীপ, সৌরভ, শুভ আর রমেন দা। গ্রূপ এ রমেন দা ই মধ্যমনি। কাঁচড়াপাড়া থেকে উঠে শিয়ালদা পর্যন্ত নরক গুলজার করতে করতে চলা। এ ওর পিছনে লাগা। তার সাথে রমেন দার নানা রকম গল্প তো আছেই। লোকটি বেশ। আমুদে মানুষ, বেশ মেতে আছেন সব কিছু নিয়ে। সুদীপ বলল " রমেন দা , বৌদি নাকি কাল আপনাকে লাথি মেরে খাট থেকে ফেলে দিয়েছে"। অমনি শুভ পোঁ ধরলো , " ও তাই ভাবি রমেন দা আজ একটু লেংচে হাঁটছে কেন?" ব্যাস, ইয়ার্কি শুরু হয়ে গেল। রোজকার মত।
হঠাৎ উল্টো দিকের দেয়ালে একটা লেখা চোখে পড়লো, হাতে লেখা, পার্মানেন্ট মার্কার দিয়ে। লেখাটা এরকম--
" সুন্দরী বান্ধবী চাই ? সাথে মনের মত ট্যুর প্যাকেজ । আমি একজন কলগার্ল। এই নম্বরে যোগাযোগ করুন"।
পাশে একটা ফোন নম্বর দিয়ে ব্র্যাকেটে একটি নাম লেখা "গীতা"
এটা নিয়েই এবার গল্প শুরু হলো। সুদীপ বলল -" শালা এবার এই সব সেমি প্রস গুলো ট্রেন এ ও ব্যবসা করা শুরু করেছে। যত্ত সব"। শুভ বলল " মাল কিন্তু পুরো খান---। কি বল রমেন দা? মালটাকে ফোন করা যাক , কি বলিস সবাই?"। রমেন দা দেখলাম লেখাটার দিকে তাকিয়ে আছে । আমি বললাম " মালটা মনে হয় রমেন দার পুরোনো চেনা, দেখছিস না কেমন থম মেরে গেছে"।
রমেন দা বলল " না রে সেসব কিছু না। তবেএকটা পুরোনো ঘটনা মনে পড়ে গেল। এই লাইনেরই। তা প্রায় বছর দশেক আগের কথা"।
রমেন দা বলতে শুরু করলো। তখনও বিয়ে থা করিনি। টুকটাক এখানে ওখানে খেপ খেলে বেড়াচ্ছি। মেয়ে দেখলেই নোলা টা সকসক করে।
কাজ বলতে তখন একটা ওয়াটার ফিল্টার কোম্পানি তে চাকরী করি, কলকাতাতেই। একটু আগে বেরোতে হত। গেদে ধরতাম। আমার সাথে কল্যানীর একটা ছেলের বন্ধুত্ব হল, সুব্রত, সুব্রত মুখার্জী। সেও আমার মতোই একটা প্রাইভেট কোম্পানির চাকরি করে। তবে আমার থেকে এক কাঠি সরেস। কোথা থেকে একটা ফলস প্রেস কার্ড ও বানিয়েছিল। আমরা এক ট্রেন ই ধরতাম। সেদিন এমনই ট্রেন লেট , তো কৃষ্ণনগর ধরলাম। বুঝলি এরকম ই সেদিন দেখলাম , কম্পার্ট মেন্টে দেয়ালে মার্কার দিয়ে লেখা -- "আমার নাম সুনীতা, শারীরিক সম্পর্ক করতে আগ্রহী যুবকরা ফোন করুন"। পাশে একটা ফোন নম্বর দেওয়া, ল্যান্ড ফোন। এদিকের ই হবে। আমার মাথায় বদবুদ্ধি ভীড় করলো, মালটাকে ফোন করে দেখলে হয়, একটু হ্যাজানোও যাবে।
ভাবলাম ফোন করা যাক কিন্তু মনে একটা স্বাভাবিক সংকোচ বোধ কাজ করছে। কি দরকার? কি লাভ? যদি ভুল ভাল বেপার হয়? যদি কোনো ট্র্যাপ হয়, এই সব আরকি। কিন্তু মনের মধ্যে একটা সাংঘাতিক কৌতুহল। অজানা সুনীতা নামে মেয়েটিকে দেখার একটা উদগ্র কৌতুহল কাজ করতে লাগলো। ভাবলাম একটা বুদ্ধি খাটাই। ট্রেন থেকে নেমে সুব্রত কে বললাম। ওকে বলতেই ও লুফে নিল।
 সুব্রত বলল - কখন ফোন করবি?
-- অফিস থেকে ফিরে , সাড়ে সাতটা নাগাদ।
--- শালা কোনো খা--কি টাইপের মাগী হতে পারে, যদি দেখা করতে বলে।
---- দেখাই তো করতে চাই।
---- মালটা যদি মাল্লু চায়, কি করবি?
---- শোন দুজনে যাব, শ পাঁচেক টাকা কাছে রাখবো। ঝামেলা হলে সালটে নেওয়া যাবে।
----- তো ঐ কথাই থাকলো, সাড়ে সাতটায় কল্যাণী স্টেশনে দেখা হবে।
সারাদিন বিভিন্ন প্ল্যান ছকলাম। আগামী কাল শনিবার। অফিস ছুটি। দেখা করতে যাওয়া যেতে পারে। মনটা একটু আনচান করে উঠলো। ব্যাপারটায় একটু সেক্সএর গন্ধ আছে। তেমন হলে মালটাকে নিয়ে নাইট শো তে একটু সিনেমা দেখা, হলের ভিতরে অন্ধকারে একটু ছোঁয়া ছুঁয়ি তো চলতে পারে।
রাত পৌনে আটটা নাগাদ সুব্রত এসে পৌঁছল। ঠিক করলাম, একজন কথা বলবো। দেখা করতে যাব। আগামীকাল। কিন্তু আসলে দুজনেই যাব। ফোন লাগালাম, একজন মহিলার গলা পেলাম, জিজ্ঞাসা করলো- "কাকে চাই"?
আমি জিজ্ঞাসা করলাম, সুনীতা আছে ? ও আমাকে চেনে । ওর সাথে আগামীকাল দেখা করতে বলেছিল।
মহিলা বলল " আসুন"।
--- কিন্তু আপনাদের বাড়ী তো চিনিনা, কোথায় যাব?
--- পায়রাডাঙ্গা স্টেশনে নেমে রিকশাওলাকে বলবেন "তারা সুন্দরী" প্রাইমারি স্কুল। স্কুলের উলটা দিকের গলির চার নম্বর বাড়ী।
-- কাল কথা হবে।
ফোন কেটে দিলাম , বেশি বললেই বেশি হ্যাজাবে।
সুব্রত বলল কি রে কি বুঝলি?
--- বুঝলি সুব্রত , শালা , চতুর্দিকেই এই মধুচক্রের ব্যাবসা ছেয়ে গেছে। তো ঐ কথাই রইল। আগামী কাল তিনটে নাগাদ এখানেই দুজনের দেখা হবে, তারপর অপারেশন সুনীতা।
পায়রাডাঙ্গা পৌঁছতে পৌঁছতে পাঁচটা বাজলো। রিকশা ধরে বললাম " তারা সুন্দরী স্কুল"।
এটা একটা গ্রামীণ জনপদ। সাধারণ, খেটে খাওয়া মানুষের ছোট ছোট পুতুলের সংসার। টালির চালের বাড়ি, একটু ভেরেন্ডার কি নিশিন্দের গাছের বেড়া দিয়ে ঘেরা। চালে লকলকে কুমড়ো বা লাউ গাছ। বাড়ির পাশে একটা দুটো সজনে কি কলা গাছ। মাঝে মাঝে একটা কি দুটো পাকা বাড়ী।
তারাসুন্দরী স্কুলের সামনে নামলাম। নির্দিষ্ট বাড়িটার সামনে পৌঁছলাম। একটা পাকা একতলা বাড়ী। নাম " শান্তি ধাম"।
সুব্রত বলল "রমেন দা, নামের বাহার দেখেছ, এরপর হয়তো দেখবে সোনাগাছির নাম বদলে আনন্দ ধাম হবে। তবে এটা গেরস্ত বাড়ী মনে হচ্ছে। এখনও সময় আছে কেটে পড়ি চল।
আমার তখন রোখ চেপে গেছে। বললাম এত ভয় খাস না। ওপরে ফিটফাট তলায় রানাঘাট। এরাও হাফ গেরস্ত, কিছু হলে তোর সাংবাদিকের কার্ড তো আছেই।
আস্তে করে ডাকলাম সুনীতা , সুনীতা আছো? দরজা খুলে এক বয়স্কা মহিলা উঁকি মারল, বিধবা। দরজা খুলে বলল "ভিতরে এসে বসুন ।"
ঘরটায় দুটো জানালা। দুটো বেতের চেয়ার রাখা। একপাশে একটা তক্তপোষ। জানলা দিয়ে বাগানের জুঁই গাছের একটা লতা ভেতরে মুখ বাড়িয়েছে। সাদা দেয়াল। একটা শো কেশ। তাতে কটা গল্পের কবিতার বই আর একটা গীতবিতান রাখা। তিন চারটে মেমেন্টো রাখা।কোনায় একটা তানপুরা কাপড়ে ঢেকে রাখা।
শোকেস এর উপরে একটা মেয়ের ছবি চোখে পড়লো, ফর্সা গায়ের রঙ, বছর একুশ বাইশ বয়েসের , একটা সালোয়ার কামিজ পরনে, মুখটা খুব মিষ্টি। বিকেলের রোদের মত একটু আদুরে আলো লেগে আছে মুখ খানিতে। প্লাস্টিকের ফ্রেমে আটকানো। মনটা বেশ খুশি হয়ে উঠলো। মালটা চাঙ্গা।
মহিলা বলল " সুনীতা , আমার মেয়ে, তা তোমরা ট্রেন এ ফোন নম্বর দেখে আসছো না?"
কি আর বলব, বললাম হ্যাঁ।
-- ঠিক আছে, বস, আমি একটু আসছি।
মহিলা চলে যেতে সুব্রতকে বললাম, দেখেছিস, মা মেয়ে মিলেই কারবার খুলেছে। তা মেয়েটা দেখতে কিন্তু মন্দ না , গান টান ও করে ।বেশ চাকুম চুকুম আছে।
সুব্রত বলল বন্ধু ভালোই মস্তি হবে মনে হচ্ছে।
মহিলা ভেতরে গেল তা প্রায় পাঁচ মিনিট হয়ে গেল। বসে আছি। একটু অস্বস্তি ও হচ্ছে।
এমন সময় মহিলা বেরিয়ে এলেন। একটা পুরানো খবরের কাগজ আমার দিকে ছুঁড়ে দিয়ে বলল "এই টা পড়ুন, এই জায়গা টা" দেখলাম, প্রায় বছর খানের আগের একটি বাংলা কাগজ, পাতা হলুদ হয়ে গেছে। ভেতরের পৃষ্ঠায় একটা খবর লাল কালি দিয়ে ঘেরা। খবরটা অনেকটা এরকম ছিল বুঝলি--
" সুনীতা দাস নামে পায়রাডাঙ্গার একজন একুশ বছরের তরুণী গতকাল ঘরের সিলিং ফ্যান থেকে ওড়না দিয়ে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে। মেয়েটি রানাঘাট কলেজে সেকেন্ড ইয়ারে পড়তো। পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে যে, মেয়েটিকে ফোন করে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন মানুষ কু প্রস্তাব দিচ্ছিল। বিভিন্ন ট্রেনের কামরায় কে বা কারা মেয়েটির নাম ও ফোন নম্বর লিখে রেখেছিল। লিখেছিল যে মেয়েটি কলগার্ল এর কাজ করে। মেয়েটির মা জানায় যে এই ঘটনার জেরে গত কয়েকদিন ধরেই মেয়েটি তীব্র অবসাদ এ ভুগছিল। গতকাল তিনি ও তার স্বামী একটি অনুষ্ঠান বাড়িতে বেরিয়ে গেল ফাঁকা বাড়ী তে মেয়েটি আত্মহত্যা করে। তার সুইসাইড নোটে মেয়েটি লিখে গেছে - "মা বিশ্বাস করো আমি খারাপ মেয়ে নই"।এলাকায় তীব্র উত্তেজনা রয়েছে। ঘটনার পরে মেয়েটির বাবা অসুস্থ হয়ে পড়েছেন।এলাকাবাসীর বক্তব্য মধ্যবিত্ত পরিবারের এই মেয়েটি অত্যন্ত ভদ্র ও মেধাবী হিসেবেই এলাকায় পরিচিত ছিল। পুলিশ জানিয়েছে ঘটনার তদন্ত চলছে।"
খবরটা পড়া শেষ হলে আর চোখ তুলতে পারছিলাম না। শুনলাম মহিলা স্বগোতোক্তির মত করে বলছে, " মেয়েটাকে লোকেরা রাত দিন বিরক্ত করত, জিজ্ঞাসা করত রেট কত, আরো খারাপ খারাপ কথা। পুলিশ, প্রধান সবাইকে জানিয়ে ছিলাম। সবাই আমার মেয়েটাকেই দোষ দিল। ও এত ভাল গান করতো। রাত বিরেতে ফোন আসা শুরু হল। শেষদিকে খুব মনমরা হয়ে গেছিল। ওর দাদা বাইরে চাকরি করে । ওর জন্যেই ফোনটা নেওয়া। সুনীতা খুব সুন্দর গান করতো জানেন, কত প্রাইজ পেয়েছিল।
শেষ দিকে ও বাড়ী থেকে বেরোত না। ফোন বাজলে চমকে চমকে উঠত। আমরা লোককে কত বলতাম, ফোন না করতে অনুরোধ করতাম। সবাই মজা করতো। বাজে বাজে গালাগালি দিত।
তারপর এই ঘটনা। ওর বাবাও অসুস্থ হয়ে পড়লো। সাতদিন পরে সে মানুষ টাও চলে গেল।
এবার আমাদের রেহাই দিন, সুনীতা তো আর নেই।
মহিলা ছবিটা বুকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে থাকলো। ছবিটার দিকে তাকিয়ে মনে হল সুনীতা বলে মেয়েটা আমার দিকে তাকিয়ে আছে। দম বন্ধ হয়ে আসছে মনে হল। মনে হল এক অসহায় মাযের কত দিনের হাহাকার এই ঘরের মধ্যে জমা হয়ে আছে। এখানে এই বাড়িতে সেই তরুণী মেয়েটির কত গান জমা হয়ে আছে। মনে হল ওর মৃত্যুর জন্য আমিও একই ভাবে দায়ী।
আস্তে আস্তে আমি আর সুব্রত ঘর থেকে বেরিয়ে এলাম। তখনও বুঝলি সেই বুক ফাটা কান্না কানে বাজছে। সেদিন একটা ঘোরের মধ্যে বাড়ী ফিরেছিলাম। তারপর থেকে বুঝলি যেখানে এমন লেখা দেখি মুছে দিই।
রমেন দা দেখি ব্যাগ থেকে একটা ব্লেড বের করে লেখাটা একটু একটু করে উঠিয়ে দিতে থাকলো। শুভ বলল রমেন দা, তুমি না শালা একটা ফালতু লোক, একটা বাজে লোক, এমন করে বলো না, শালা মন খারাপ করে দাও।
দেখি ওর চোখে জল চিক চিক করছে। সুদীপ, সৌরভ ও দেখলাম ট্রেনের বাইরের দিকে তাকিয়ে, লোনা জ্লের কিছু আভাষ সেখানেও।
আমার চোখটাও এত কড়কর করছে । মুখটা অন্যদিকে ফিরিয়ে রুমাল বের করলাম।
শেয়ার করতে পারেন, বাধা নেই।

https://www.facebook.com/pproy76/posts/10212263820737651