Friday, December 6, 2013

- ২৩. শিবপুর পলিটেকনিক ও আমতলা স্টেট ওয়েলফেয়ার হোম

 

- ২৩. শিবপুর পলিটেকনিক ও আমতলা স্টেট ওয়েলফেয়ার হোম

১৯৪৭ সালে স্বাধীনতার আনন্দের সাথে জুড়ে ছিল দেশভাগের বিষাদ। হাজার হাজার ভূমিহীন জীবিকাহীন নরনারীর ঢেউ এসে আছড়ে পড়লো সীমান্তপার্শ্ববর্তী রাজ্যগুলিতে। পশ্চিমবঙ্গ ব্যতিক্রম নয়। সরকার থেকে চালু করা হল পি এল ক্যাম্প পার্মানেন্ট লাইবিলিটি ক্যাম্প। বি ই কলেজের বকুলতলায় ছিল একটা সাময়িক পি এল ক্যাম্প। স্বর্গীয় নারায়ন সান্যালের লেখা বকুলতলা পি এল ক্যাম্প বা দণ্ডকারণ্য কাহিনী অনেকেরই নিশ্চয়ই পড়া। রাজনৈতিক বা সামজিক প্রেক্ষাপট ছেড়ে আসা যাক বি ই কলেজে এই ঘটনার ফলে দীর্ঘস্থায়ী কিছু পরিবর্তনে।

 

দেশভাগের আগে থেকেই ছিল শিল্পের জন্যে দক্ষ কারিগরের চাহিদা। দেশভাগের পর নতুন প্রশাসনিক রদবদলে সেই চাহিদা আরও বৃদ্ধি পেল। সরকারের কাছে প্রস্তাব গেল যে অনেকেই অর্থ বা মেধার জন্যে স্নাতক পর্যায়ের ইঞ্জিনিয়ারিং শিক্ষা গ্রহন করতে না পারলেও কারিগরি শিক্ষা পেলে একটা ভদ্রস্থ জীবনযাপন করতে পারে।  এছাড়াও পূর্ববঙ্গ থেকে আগত শরণার্থীদের মধ্যে যোগ্যদের ট্রেনিং দিয়ে শিল্পে কারিগরি কাজে লাগানো যেতে পারে। উদ্বাস্তু ত্রাণ ও পুনর্বাসন প্রকল্পের অধীনে (ডিসপারসাল স্কিম) এই পরিকল্পনা রুপায়নের  প্রস্তাব নেওয়া হয়।

 

পশ্চিমবঙ্গের তদানীন্তন মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ বিধান চন্দ্র রায়ের উদ্যোগে বি ই কলেজ চত্বরেই চালু হয় শিবপুর পলিটেকনিকের ১২ ই জুলাই, ১৯৫০ সালে। মেইন বিল্ডিং-এর পিছনের ওয়ার্কশপগুলিতেই ক্লাস হতো পলিটেকনিকের। যার মধ্যে কিছু ওয়ার্কশপ এখন ভাঙ্গাচোরা অবস্থায় টিকে আছে। বাকি কয়েকটি স্নাতকস্তরের ব্যবহৃত হয় অথবা পলিটেকনিকের নিয়মিত ক্লাস হয় বলে রক্ষনাবেক্ষন করা হয় এবং পরিকাঠামোর উন্নয়নও হয়েছে।

 

প্রথম থেকেই শিবপুর পলিটেকনিক ছিল বি ই কলেজের একটি অংশ। বি ই কলেজের প্রিন্সিপাল পদাধিকার বলে শিবপুর পলিটেকনিকেরও প্রিন্সিপাল হতেন।  কলেজ ও পলিটেকনিকের বেতনক্রমও ছিল একইরকম। পুরনো অ্যাডমিন বিল্ডিং বা মেইন কলেজ বিল্ডিং-এই পলিটেকনিকের অফিস ছিল। ছাত্রদের এক বছরের ট্রেনিং নিতে হত যার মধ্যে একটা ভাগ ছিল প্রাথমিক শিক্ষা আর বাকিটা নিজ নিজ বিভাগের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত বৃত্তিমুলক শিক্ষা। দুটি সেশনে ছাত্ররা ভর্তি হতে পারতো, সেগুলি শুরু হতো পয়লা জুলাই আর পয়লা জানুয়ারী থেকে। ধীরে ধীরে একসময় প্রায় একশটি শাখায় প্রশিক্ষণ দেওয়া হতো।

 

প্রশিক্ষণের এক চতুর্থাংশ জুড়ে থাকা প্রাথমিক শিক্ষার মধ্যে থাকতো সমাজ বিজ্ঞান, ইংরেজি ভাষা, সরল গনিত, সাধারন বিজ্ঞান, নকশা তৈরী, ব্লু প্রিন্ট পড়া ইত্যাদি। বাকি তিন চতুর্থাংশের প্রশিক্ষণ হতো কর্মশালায়। প্রথমদিকের কিছু বিভাগের মধ্যে ছিল

ক. অটোমোবাইল মেকানিক,

খ. ব্ল্যাকস্মিথ,

গ. কারপেন্টার,

ঘ. ইলেকট্রিশিয়ান,

ঙ. ইলেকট্রোপ্লেটার,

চ. ফিটার,

ছ. আই সি ইঞ্জিন মেকানিক,

জ. ল্যাবরেটরী হেল্পার,

ঝ. মেশিনিস্ট,

ঞ. ম্যাসন,

ট.  মোল্ডার,

ঠ. প্যাটার্ন মেকার,

ড. পেন্টার,

ঢ. প্লাম্বার,

ণ. রেডিও মেকানিক,

ত. রেফ্রিজারেশন মেকানিক,

থ. রনিও প্রিন্টার,

দ. শিট মেটাল ওয়ার্কার,

ধ. টুল মেকার,

ন. ট্রেসার,

প. টার্নার,

ফ. ওয়েল্ডার এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় শাখা।

 

পলিটেকনিক শুরু হবার অল্পদিন পরেই পঁচাত্তর জন অনাথ যুবকের টেকনিক্যাল ট্রেনিং স্কিমের অধীনে প্রশিক্ষণ শুরু হয় বি ই কলেজে ১৯৫১ সালের ২১ শে জুন থেকে। এই বিদ্যার্থীরা থাকতো কলেজ থেকে এক মাইল দূরে ক্যারি রোডে আমতলা স্টেট ওয়েলফেয়ার হোমে। একজন সুপারের দায়িত্বে এদের সমস্ত খরচ (থাকা, খাওয়া, জামাকাপড়, খেলাধুলো ইত্যাদি) বহন করতো পশ্চিমবঙ্গ সরকারের  শিক্ষা দপ্তর। দুই থেকে পাঁচ বছরের বিভিন্ন পাঠক্রমে এদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হতো বিভিন্ন শাখায়। শাখাগুলির যে তালিকা পাওয়া যায়, তা হল

ক. রেডিও মেকানিসম,

খ. রনিও প্রিন্টিং,

গ. ইলেকট্রোপ্লেটিং,

ঘ. ম্যাসনারি,

ঙ. পেইন্টিং,

চ. ওয়েল্ডিং,

ছ. টিন স্মিথি,

জ. টার্নিং,

ঝ. অটোমোবাইল মেকানিসম,

ঞ. ইলেক্ট্রিক,

ট. আই সি ইঞ্জিন মেকানিসম,

ঠ. প্যাটার্ন মেকার,

ড. ফিটিং,

ঢ. ব্ল্যাক স্মিথি,

ণ. কারপেনট্রি,

ত. মোল্ডিং,

থ. মেশিনিস্ট,

দ. প্লাম্বিং।  

 

পড়াশুনোর সাথে সাথে স্টেট ওয়েলফেয়ার হোমের ছেলেরা অভিনয়ে অংশগ্রহন করতো। এরা পলিটেকনিকের অন্যান্য বিদ্যার্থীদের সাথে বার্ষিক ক্রীড়া বা সংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করতো এবং কলেজের রাষ্ট্রীয় রণশৈক্ষবাহিনীর (NCC) প্রশিক্ষণ নিত। ১৯৫৪ সালের মার্চ নাগাদ ফার্স্ট বেঙ্গল ব্যাটালিয়ন এনসিসির অধীনে ৩৩ জন ক্যাডেটের একটা জুনিয়র ডিভিশন এনসিসি বাহিনী ছিল। তখন থেকে ধারাবাহিকভাবে এই বাহিনী বিভিন্ন বার্ষিক প্রতিযোগিতায় সাফল্যের সঙ্গে অংশগ্রহন করতো।

 

আমতলা স্টেট ওয়েলফেয়ার হোম প্রথম থেকেই বি ই কলেজের অধীনে ছিল। পরে এই স্কিমটি বাতিল হয়ে যায়। সুত্র অনুসারে এখন হোমের একটিমাত্র কর্মচারী রাজ্য সরকারের অন্য একটি বিভাগে ডেপুটেশনে কর্মরত। স্টেট ওয়েলফেয়ার হোমের বাড়িটি পরবর্তীকালে পোড়ো বাড়ী হয়ে যায় এবং সমাজবিরোধীদের আখড়া হয়ে ওঠে। কলেজের থেকে দূরে হওয়ার জন্যে রক্ষনাবেক্ষন এবং নজরদারিরও সমস্যা হত। পরবর্তীকালে রাজ্য সরকারের সশস্ত্র বাহিনীর কার্যালয় হিসেবে একটি জায়গার দরকার পড়লে, বি ই কলেজের শেষ প্রিন্সিপ্যাল এবং ডিমড ইউনিভার্সিটির প্রথম ডিরেক্টর ডঃ বিমল সেন এক চুক্তি অনুসারে এই জায়গাটি সশস্ত্র বাহিনীর হাতে তুলে দেন।

 

প্রথম থেকেই শিবপুর পলিটেকনিকে পাশ করা ছাত্রদের বি ই কলেজের প্রিন্সিপ্যাল প্রশংসাপত্র প্রদান করতেন। ১৯৫৬ সাল থেকে ভারতে আইটিআই পাঠক্রম শুরু হয় কারিগরি শিক্ষানবিশ তৈরি করার উদ্দেশ্যে। পাশ করা ছাত্রদের ভারত সরকারের ডিপার্টমেন্ট অফ ট্রেনিং (ডিটি) থেকে প্রশংসাপত্র প্রদান করা হত। স্বাভাবিকভাবেই শিবপুর পলিটেকনিক থেকে পাশ করা ছাত্রদের প্রশংসাপত্রের বৈধতা সীমাবদ্ধ হয়ে যায়। এই সমস্যায় ছাত্রসংখ্যাও যথেষ্ট হ্রাস পায়। ১৯৮৬ সালে শিবপুর পলিটেকনিককে বি ই কলেজের অধীনে রেখেই আইটিআই পর্যায়ে উন্নীত করা হয়, যদিও মোট অনুদানের অঙ্ক সমান থেকে যায়।

 

ঠিক হয় এই অনুদানে চালানোর জন্যে বিভাগের সংখ্যা কমিয়ে সাতটিতে নিয়ে আসা হবে

ক. ফিটার,

খ. ইলেক্ট্রিসিয়ান,

গ. টার্নার,

ঘ. মেশিনিস্ট,

ঙ. মেকানিক মটর ভেহিকেল

চ. টুল অ্যান্ড ডাইমেকার

ছ. ড্রাফটসম্যান

 

এছাড়াও সম্বন্ধযুক্ত কিছু শাখার অনুমোদন থাকলেও প্রশিক্ষণ দেওয়া সম্ভব হয় না, যেমন

ক. কারপেনট্রি,

খ. শিট মেটাল,

গ. মোল্ডিং,

ঘ. স্মিথি অ্যান্ড ওয়েল্ডিং।

 

১৯৯৩ সালে বি ই কলেজ কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন থেকে স্বশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত হয় - বি ই কলেজ (ডিমড ইউনিভার্সিটি)। নিয়ম অনুসারে তৎকালীন প্রিন্সিপ্যাল পলিটেকনিকের দায়িত্ব ছেড়ে দেন। পলিটেকনিকের প্রশিক্ষকদের মধ্যে একজনকে নির্বাচিত করা হয় পলিটেকনিকের দায়িত্বভার সামলানোর জন্যে। শিবপুর পলিটেকনিক ডিমড ইউনিভার্সিটির অধীনে একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ কলেজে পরিণত হয়। এতদিন স্নাতক স্তরের ক্লাসের পাশাপাশি ফাঁকা সময়ে একই ওয়ার্কশপে পলিটেকনিকের প্রশিক্ষণ ও পঠনপাঠন চলতো। ধীরে ধীরে ডিরেক্টর ডঃ স্পর্শমণি চ্যাটার্জির আমলে অব্যবহৃত দুর্গাপুর হোস্টেল ভবনের সংস্কার সাধন করে পলিটেকনিক ওয়ার্কশপ ও প্রশাসনিক ভবন নিয়ে আসা হয়। কিছুদিন পর থেকেই শুধুমাত্র পলিটেকনিকের জন্যে সম্পূর্ণ সময়ের প্রিন্সিপ্যালের পদ সৃষ্টি করা হয়। ২০০৩ সালে শিবপুর পলিটেকনিকের নাম পরিবর্তন হয়। নতুন নাম হয় শিবপুর আই টি আই।

 

শুরু থেকে প্রতি বিভাগের জন্যে একজন করে প্রশিক্ষক থাকতেন এবং এক ইউনিট মানে ১৬ টি করে বিদ্যার্থী ভর্তি করা হত। ২০০৮ সালে পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশীপ (পিপিপি) মডেলে ভারত সরকারের ডাইরেক্টর জেনারেল অফ এমপ্লয়মেন্ট অ্যান্ড ট্রেনিং  (Directorate General of Employment & Training - DGET) এর অধীনে এটিকে সেন্টার অফ এক্সেলেন্সে উন্নীত করার প্রস্তাবনা আনা হয়। পিপিপি মডেলে নতুন একটি বিভাগের অনুমোদন পাওয়া যায় ইলেক্ট্রিক্যাল। পূর্বোক্ত বিভাগগুলির মধ্যে ফিটার এবং ইলেক্ট্রিসিয়ান পিপিপি মডেলে চালু ইলেক্ট্রিক্যালের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এই বিভাগে ছয় ইউনিট বা ১২৬ করে ছাত্রছাত্রী নেওয়ার কথা ঠিক হয়। সম্মতি পাওয়া যায় আগেকার অন্যান্য বিভাগে ছাত্রসংখ্যা বাড়িয়ে ২১ জন করে করার। যদিও কার্যক্ষেত্রে বিশ্ব ব্যাংকের কাছ থেকে এককালীন একটা তহবিল বাদে অন্য কিছুর সুরহা হয়নি। দরকারি প্রশিক্ষকের অনুমোদন, উপযুক্ত জায়গা, রক্ষণাবেক্ষণের জন্যে অনুদান এসব এখনও বিশ বাঁও জলে।

 

ইতিমধ্যে পুরনো ওয়ার্কশপ বিল্ডিং-এর পাশে পলিটেকনিকের একটি বাড়ী তৈরী শুরু হয়। কিন্তু বেশ কিছুটা কাজ হয়ে যাবার পরেও সরকারী নিষেধাজ্ঞায় সেটির কাজ বন্ধ করে দিতে হয়। সম্প্রতি একটি প্রস্তাব নেওয়া হয়েছে, পলিটেকনিককে থার্ড গেটের কাছে, লো কষ্ট হাউসগুলির পাশে ২ বিঘা জমিতে স্থানান্তরিত করার। যদিও প্রয়োজনীয় অনুদান এবং চূড়ান্ত সইসাবুদের কাজ লাল ফিতের ফাঁসে বন্দী। যদিও আশার কথা এখন চালু সাতটি বিভাগের কোনটিরই আসন ফাঁকা পড়ে থাকে না। পরিশেষে ২০০৩ সালে শিবপুর পলিটেকনিক নামবদল করে শিবপুর আইটিআই নামে পরিচিত।

 

তথ্যসুত্রঃ বি ই কলেজর শতবর্ষ পূর্তি পত্রিকা এবং বর্তমান আইটিআই প্রিন্সিপ্যাল ও অন্যান্য প্রশিক্ষকবৃন্দ।

 

পুনঃ গত সপ্তাহে তথ্য সংগ্রহে আইটিআই গিয়ে উষ্ণ অভ্যর্থনা পেয়েছিলাম। কিন্তু আইটিআই-এর দৈনদশা দেখে খুব খারাপ লেগেছিল। আমাকে প্রয়োজনীয় তথ্য দেবার পরে এক প্রশিক্ষক জানতে চান এগুলো আমি শুধু জানতে এসেছি না কোথাও লিখবো। লিখবো বলতে খুব উৎসাহিত হয়ে করুণসুরে ওনারা বললেনঃ দেখুন ডঃ বিমল সেনের পরেও ডঃ স্পর্শমণি চ্যাটার্জি ও বর্তমান উপাধ্যাক্ষ ডঃ অজয় রায়ের সহযোগিতা এবং আন্তরিকতা থাকলেও পয়সার বড়ই অভাব। দেখুন আমাদের টয়লেট বা ক্লাসরুমের অবস্থা। আপনারা, প্রাক্তন ছাত্ররা তো কলেজের অনেক কিছুর উন্নতি সাধনের অনেক কিছু উদ্যোগ নেন। দেখুন না যদি আমাদের জন্যে কিছু করা যায়। যদি প্রতিশ্রুত সরকারী অনুদান একটু তাড়াতাড়ি পাওয়া যায়। চেষ্টা করবো বলা ছাড়া আমার কাছে কোন উত্তর ছিল না।

Monday, November 25, 2013

শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের কিছু কবিতা

শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের কিছু কবিতা 


অবনী বাড়ি আছো
অবনী বাড়ি আছো
অবনী বাড়ি আছো
দুয়ার এঁটে ঘুমিয়ে আছে পাড়া
কেবল শুনি রাতের কড়ানাড়া
অবনী বাড়ি আছো?’

বৃষ্টি পড়ে এখানে বারোমাস
এখানে মেঘ গাভীর মতো চরে
পরাঙ্মুখ সবুজ নালিঘাস
দুয়ার চেপে ধরে
অবনী বাড়ি আছো?’

আধেকলীন হৃদয়ে দূরগামী
ব্যথার মাঝে ঘুমিয় পড়ি আমি
সহসা শুনি রাতের কড়ানাড়া
অবনী বাড়ি আছ?’

আমাকে পোড়াও
ও চির প্রনম্য অগ্নি আমাকে পোড়াও
প্রথমে পোঁড়াও ওই পা দুটি
যা ছলৎ শক্তি হীন ।
তারপর যে হাতে আজ প্রেম পরিচ্ছন্নতা কিছু নেই
এখন বাহুর ফাদে ফুলের বর
এখন কাঁধের পরে দায়িত্বহীনতা
ওদের পুঁড়িয়ে
এসো , এসো হৃদয়ের কাছে
দাঁড়াও লহমা।
তারপর ,ধংস করো
সত্য মিথ্যা রঙ্গে
শীতে স্তব্ধ জ্ঞান পীট ।
রক্ষা করো, রক্ষা করো দুটি চোখ
হয়ত তাদের এখনো দেখার কিছু কিছু বাকী আছে ।
অশ্রুপাত শেষ হলে , নষ্ট করো আঁখি ।
কুঁড়িয়ো না ফুলো মালা
স্তবক সুগন্ধে আলু থালু প্রিয়কর স্পর্শ
ওর গায়ে লেগে আছে
গঙ্গা জ্বলে ভেসে যেতে দিও ওকে মুক্ত ,স্বেচ্ছাচারী
ও চির প্রনম্য অগ্নি আমাকে পোড়াও।

আমি যাই
যেখানেই থাকো
এপথে আসতেই হবে
ছাড়ান্ নেই
সম্বল বলতে সেই
দিন কয়েকের গল্প
অল্প অল্পই
আমি যাই
তোমরা পরে এসো
ঘড়ি-ঘন্টা মিলিয়ে
শাক-সবজি বিলিয়ে
তোমরা এসো

আতাচোরা
আতাচোরা পাখিরে
কোন তুলিতে আঁকি রে
হলুদ ?
বাঁশ বাগানে যইনে
ফুল তুলিতে পাইনে
কলুদ
হলুদ বনের কলুদ ফুল
বটের শিরা জবার মূল
পাইতে
দুধের পাহাড় কুলের বন
পেরিয়ে গিরি গোবর্ধন
নাইতে
ঝুমরি তিলাইয়ার কাছে
যে নদিটি থমকে আছে
তাইতে
আতাচোরা পাখিরে
কোন তুলিতে আঁকি রে
হলুদ ? 


এবার হয়েছে সন্ধ্যা
এবার হয়েছে সন্ধ্যা। সারাদিন ভেঙেছো পাথর
পাহাড়ের কোলে
আষাঢ়ের বৃষ্টি শেষ হয়ে গেলো শালের জঙ্গলে
তোমারও তো শ্রান্ত হলো মুঠি
অন্যায় হবে না - নাও ছুটি
বিদেশেই চলো
যে কথা বলনি আগে, এ-বছর সেই কথা বলো।
শ্রাবনের মেঘ কি মন্থর!
তোমার সর্বাঙ্গ জুড়ে জ্বর
ছলোছলো
যে কথা বলনি আগে, এ-বছর সেই কথা বলো।
এবার হয়েছে সন্ধ্যা, দিনের ব্যস্ততা গেছে চুকে
নির্বাক মাথাটি পাতি, এলায়ে পড়িব তব বুকে
কিশলয়, সবুজ পারুল
পৃথিবীতে ঘটনার ভুল
চিরদিন হবে
এবার সন্ধ্যায় তাকে শুদ্ধ করে নেওয়া কি সম্ভবে?
তুমি ভালোবেসেছিলে সব
বিরহে বিখ্যাত অনুভব
তিলপরিমাণ
স্মৃতির গুঞ্জন - নাকি গান
আমার সর্বাঙ্গ করে ভর?
সারাদিন ভেঙ্গেছো পাথর
পাহাড়ের কোলে
আষাঢ়ের বৃষ্টি শেষ হয়ে গেলো শালের জঙ্গলে
তবু নও ব্যথায় রাতুল
আমার সর্বাংশে হলো ভুল
একে একে শ্রান্তিতে পড়েছি নুয়ে। সকলে বিদ্রূপভরে দ্যাখে।

এক অসুখে দুজন অন্ধ
আজ বাতাসের সঙ্গে ওঠে, সমুদ্র, তোর আমিষ গন্ধ
দীর্ঘ দাঁতের করাত ও ঢেউ নীল দিগন্ত সমান করে
বালিতে আধ-কোমর বন্ধ
এই আনন্দময় কবরে
আজ বাতাসের সঙ্গে ওঠে, সমুদ্র, তোর আমিষ গন্ধ |
হাত দুখানি জড়ায় গলা, সাঁড়াশি সেই সোনার অধিক
উজ্জ্বলতায় প্রখর কিন্তু উষ্ণ এবং রোমাঞ্চকর
আলিঙ্গনের মধেযে আমার হৃদয় কি পায় পুচ্ছে শিকড়
আঁকড়ে ধরে মাটির মতন চিবুক থেকে নখ অবধি ?
সঙ্গে আছেই
রুপোর গুঁড়ো, উড়ন্ত নুন, হল্লা হাওয়ার মধ্যে, কাছে
সঙ্গে আছে
হয়নি পাগল
এই বাতাসে পাল্লা আগল
বন্ধ ক'রে
সঙ্গে আছে
এক অসুখে দুজন অন্ধ !
আজ বাতাসের সঙ্গে ওঠে, সমুদ্র, তোর আমিষ গন্ধ । 

একবার তুমি
একবার তুমি ভালোবাসতে চেষ্টা করো-
দেখবে, নদির ভিতরে, মাছের বুক থেকে পাথর ঝরে পড়ছে
পাথর পাথর পাথর আর নদী-সমুদ্রের জল
নীল পাথর লাল হচ্ছে, লাল পাথর নীল
একবার তুমি ভালোবাসতে চেষ্টা করো ।

বুকের ভেতর কিছু পাথর থাকা ভালো- ধ্বনি দিলে প্রতিধ্বনি পাওয়া যায়
সমস্ত পায়ে-হাঁটা পথই যখন পিচ্ছিল, তখন ওই পাথরের পাল একের পর এক বিছিয়ে
যেন কবিতার নগ্ন ব্যবহার , যেন ঢেউ, যেন কুমোরটুলির সালমা-চুমকি- জরি-মাখা প্রতিমা
বহুদূর হেমন্তের পাঁশুটে নক্ষত্রের দরোজা পর্যন্ত দেখে আসতে পারি ।

বুকের ভেতরে কিছু পাথর থাকা ভাল
চিঠি-পত্রের বাক্স বলতে তো কিছু নেই - পাথরের ফাঁক - ফোকরে রেখে এলেই কাজ হাসিল-
অনেক সময়তো ঘর গড়তেও মন চায় ।

মাছের বুকের পাথর ক্রমেই আমাদের বুকে এসে জায়গা করে নিচ্ছে
আমাদের সবই দরকার । আমরা ঘরবাড়ি গড়বো - সভ্যতার একটা স্থায়ী স্তম্ভ তুলে ধরবো
রূপোলী মাছ পাথর ঝরাতে ঝরাতে চলে গেলে
একবার তুমি ভলবাসতে চেষ্টা করো । 

বাগানে কি ধরেছিলে হাত
যবে হাত ধরেছিলে হাতে
এ-প্রাণ ভরেছে অকস্মাতে
সকল বিস্ময়
তখনই তো ধ্বংসের সময়,
তখনই তো নির্মাণের জয়।

তোমার হাতের মাঝে আছে পর্যটন-
একথা কি খুশি করে মন?
একথা কি দেশ ঘুরে আসে
স্মরণীয় বসন্তবাতাসে!

এবার হলো না তবু ছুটি
দুলে ওঠে মোরগের ঝুঁটি
বেলা গেলো - বুকে রক্তপাত

বাগানে কি ধরেছিলে হাত
বাগানে কি ধরেছিলে হাত? 

ভিতর-বাইরে বিষম যুদ্ধ
ইচ্ছে ছিলো তোমার কাছে ঘুরতে-ঘুরতে যাবোই
আমার পুবের হাওয়া।
কিন্তু এখন যাবার কথায়
কলম খোঁজে অস্ত্র কোথায়
এবং এখন তোমার পাশে দাঁড়িয়ে-থাকা কুঞ্জলতায়
রক্তমাখা চাঁদ ঢেকেছে
আকুল চোখ ও মুখের মলিন
আজকে তোমার ভিতর-বাইরে বিষম যুদ্ধ পুবের হাওয়া।।
মনে মনে বহুদূর চলে গেছি
মনে মনে বহুদূর চলে গেছি - যেখান থেকে ফিরতে হলে আরো একবার জন্মাতে হয়
জন্মেই হাঁটতে হয়
হাঁটতে-হাঁটতে হাঁটতে-হাঁটতে
একসময় যেখান থেকে শুরু করেছিলাম সেখানে পৌঁছুতে পারি
পথ তো একটা নয় -
তবু, সবগুলোই ঘুরে ফিরে ঘুরে ফিরে শুরু আর শেষের কাছে বাঁধা
নদীর দু - প্রান্তের মূল
একপ্রান্তে জনপদ অন্যপ্রান্ত জনশূণ্য
দুদিকেই কূল, দুদিকেই এপার-ওপার, আসা-যাওয়া, টানাপোরেন -
দুটো জন্মই লাগে
মনে মনে দুটো জন্মই লাগে। 

ছিন্ন বিছিন্ন
এই যে আছি, থাকবো না আর
সময় হলে লুকিয়ে যাবার
তখন কি কেউ দেখতে পাবে
আমার সঙ্গে পথ হারাবে ?
কক্ষনো নয়,কক্ষনো না
আমিতো নই সবার চেনা !  

চতুর্দশপদী কবিতাবলী
ভালোবাসা পেলে সব লন্ডভন্ড করে চলে যাবো
যেদিকে দুচোখ যায়- যেতে তার খুশি লাগে খুব ।
ভালোবাসা পেলে আমি কেন পায়সান্ন খাবো
যা খায় গরিবে, তাই খাবো বহুদিন যত্ন করে ।
ভালোবাসা পেলে আমি গায়ের সমস্ত মুগ্ধকারী
আবরণ খুলে ফেলে দৌড় ঝাঁপ করবো কড়া রোদে...
ভালোবাসা পেলে জানি সব হবে । না পেলে তোমায়
আমি কি বোবার মতো বসে থাকবো-
ভালোবাসা না পেলে কি আমার এমনি দিন যাবে
চোরের মতন, কিংবা হাহাকারে সোচ্চার , বিমনা-
আমি কি ভীষণ ভাবে তাকে চাই ভালোবাসা জানে। 

দিন যায়
সুখের বারান্দা জুড়ে রোদ পড়ে আছে
শীতের বারান্দা জুড়ে রোদ পড়ে আছে
অর্ধেক কপাল জুড়ে রোদ পড়ে আছে
শুধু ঝড় থমকে আছে গাছের মাথায়
আকাশমনির ।

ঝড় মানে ঝোড়ো হাওয়া, বাদ্‌লা হাওয়া নয়
ক্রন্দনরঙের মত নয় ফুলগুলি
চন্দ্রমল্লিকার ।

জয়দেবের মেলা থেকে গান ভেসে আসে
সঙ্গে ওড়ে ধুলোবালি, পায়ের নূপুর
সুখের চট্‌কা ভাঙে গৈরিক আবাসে
দিন যায় রে বিষাদে, ষাদে, মিছে দিন যায়  

কিছু মায়া রয়ে গেলো
সকল প্রতাপ হল প্রায় অবসিত
জ্বালাহীন হৃদয়ের একান্ত নিভৃতে
কিছু মায়া রয়ে গেলো দিনান্তের,
শুধু এই -
কোনোভাবে বেঁচে থেকে প্রণাম জানানো
পৃথিবীকে।
মূঢ়তার অপনোদনের শান্তি,
শুধু এই -
ঘৃনা নেই, নেই তঞ্চকতা,
জীবনজাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু। 

মনে মনে বহুদূর চলে গেছি
মনে মনে বহুদূর চলে গেছি - যেখান থেকে ফিরতে হলে আরো একবার জন্মাতে হয়
জন্মেই হাঁটতে হয়
হাঁটতে-হাঁটতে হাঁটতে-হাঁটতে
একসময় যেখান থেকে শুরু করেছিলাম সেখানে পৌঁছুতে পারি
পথ তো একটা নয় -
তবু, সবগুলোই ঘুরে ফিরে ঘুরে ফিরে শুরু আর শেষের কাছে বাঁধা
নদীর দু - প্রান্তের মূল
একপ্রান্তে জনপদ অন্যপ্রান্ত জনশূণ্য
দুদিকেই কূল, দুদিকেই এপার-ওপার, আসা-যাওয়া, টানাপোরেন -
দুটো জন্মই লাগে
মনে মনে দুটো জন্মই লাগে । 

পাবো প্রেম কান পেতে রেখে
বড় দীর্ঘতম বৃক্ষে ব'সে আছো, দেবতা আমার |
শিকড়ে, বিহ্বল প্রান্তে, কান পেতে আছি নিশিদিন
সম্ভ্রমের মূল কোথা এ-মাটির নিথর বিস্তারে ;
সেইখানে শুয়ে আছি মনে পড়ে, তার মনে পড়ে ?
যেখানে শুইয়ে গেলে ধিরে-ধিরে কত দূরে আজ !
স্মারক বাগানখনি গাছ হ'য়ে আমার ভিতরে
শুধু স্বপ্ন দীর্ঘকায়, তার ফুল-পাতা-ফল-শাখা
তোমাদের খোঁডা-বাসা শূন্য ক'রে পলাতক হলো |
আপনারে খুঁজি আর খুঁজি তারে সঞ্চারে আমার
পুরানো স্পর্শের মগ্ন কোথা আছো ? বুঝি ভুলে গেলে |
নীলিমা ঔদাস্তে মনে পড়ে নাকো গোষ্ঠের সংকেত ;
দেবতা সুদূর বৃক্ষে, পাবো প্রেম কান পেতে রেখে | 

পরস্ত্রী
যাবো না আর ঘরের মধ্যে অই কপালে কী পরেছো
যাবো না আর ঘরে
সব শেষের তারা মিলালো
আকাশ খুঁজে তাকে পাবে না
ধরে-বেঁধে নিতেও পারো তবু সে-মন ঘরে যাবে না
বালক আজও বকুল কুড়ায় তুমি কপালে কী পরেছো
কখন যেন পরে?
সবার বয়স হয়
আমার
বালক-বয়স বাড়ে না কেন
চতুর্দিক সহজ শান্ত
হদৃয় কেন স্রোতসফেন
মুখচ্ছবি সুশ্রী অমন, কপাল জুড়ে কী পরেছো
অচেনা,
কিছু চেনাও চিরতরে। 

শিশিরভেজা শুকনো খড়
শিশিরভেজা শুকনো খড় শিকড়বাকড় টানছে
মিছুবাড়ির জনলা দোর ভিতের দিকে টানছে
প্রশাখাছাড় হৃদয় আজ মূলের দিকে টানছে
ভাল ছিলুম জীর্ণ দিন আলোর ছিল তৃষ্ণা
শ্বেতবিধুর পাথর কুঁদে গড়েছিলুম কৃষ্ণা
নিরবয়ব মূর্তি তার, নদীর কোলে জলাপাহার
বনতলের মাটির ঘরে জাতক ধান ভানছে
শুভশাঁখের আওয়াজ মেলে জাতক ধান ভানছে
করুণাময় ঊষার কোলে জাতক ধান ভানছে
অপরিসীম দুঃখসুখ ফিরিয়েছিলো তার মুখ
প্রসারণের উদাসীনতা কোথাও ব'সে কাঁদছে
প্রশাখাছাড় হৃদয় আজ মূলের দিকে টানছে 

সীমান্ত প্রস্তাব - মুখ্যমন্ত্রীর প্রতি নিবেদন
একটি ভিখারি ছেলে ভালোবেসে দেখেছিল ভাত
আর পরখ করেছিল
জ্যোত্স্নায় ছড়ানো ধানগাছগুলি, ধানের গোড়ায়
শুদ্ধ জলভরা মাখনের মতো
মাটির সাবলিলতার চিকণ-ফাঁপানো ধান,
ধানগুলি ভাত হতে পারে ?
নির্বাক দেবতা কথা বলতে পারে
লোহা গলতে পারে
কাঠের ভূভাগ পারে চিৎ হতে নারীদের মতো ?
তবু সে ভিখারি ছেলে ভালোবেসে দেখেছিল ভাত |
ভালোবেসে দেখেছিল বহুতর দর্শন জীবনে
জীবন ছেড়েও কতো গাঁজায় আক্রান্ত হয়ে কতো
জীবনেও ধান ছাড়া, নারী ছাড়া, জ্যোত্স্নাটুকু ছাড়া
ওপরে কি যেন আছে |
সবারই ওপরে আছেন ভগবান পান্থ-নির্যাতনে
সবারই ওপরে আছেন ভগবান পরিব্রজাতার
সবারই ওপরে আছেন ভগবান মানুষের হয়ে
ভিখারি ছেলেটিকে দুটি ভাত দেবার ব্যস্ততায়
বাসের মতো সমসাময়িক, বাসের চেয়েও মত্ত
পৌঁছে দিতে সৎ |

ভিখারির ভালো ছেলে ছাড়া ছিল বহু মন্দ ছেলে
তারা ভালোবাসা নিয়ে মাখামাখি করেনি কখনো
তারাও তো বেঁচে আছে তারাও তো আছে অনাবিল
আমলকির মতো কত ভলো ধরণের ফলই
পৃথিবীতে আছে
ভিখারির ভালো ছেলে মন্দ ছেলে ঝরে গেছে

স্টেশন ভাসিয়ে বৃষ্টি
মনে পড়ে স্টেশন ভাসিয়ে বৃষ্টি রাজপথ 'রে ক্রমাগত
সাইকেল ঘন্টির মতো চলে গেছে, পথিক সাবধান
শুধু স্বেচ্ছাচারী আমি, হাওয়া আর ভিক্ষুকের ঝুলি
যেতে-যেতে ফিরে চায়, কুড়োতে-কুড়োতে দেয় ফেলে
যেন তুমি, আলস্যে এলে না কাছে, নিছক সুদূর
হয়ে থাকলে নিরাত্মীয় ; কিন্তু কেন? কেন, তা জানো না।
মনে পড়বার জন্য? হবেও বা স্বাধীনতাপ্রিয়
'লে কি আক্ষেপ? কিন্তু বন্দী হয়ে আমি ভালো আছি।
তবু কোনো খর রৌদ্রে, পাটকিলে কাকের চেরা ঠোঁটে
তৃষ্ণার চেহারা দেখে কষ্ট পাই, বুঝে নিতে পারি
জলের অভাবে নয়, কোন টক লালার কান্নায়
তার মর্মছেঁড়া ডাক; কাক যেন তোমারই প্রতীক
রূপে নয়, বরং স্বভাবে - মনে পড়ে, মনে পড়ে যায়
কোথায় বিমূঢ় হয়ে বসে আছো হাঁ-করা তৃষ্ণায়! 

 
চাবি
আমার কাছে এখনো পড়ে আছে
তোমার প্রিয় হারিয়ে যাওয়া চাবি
কেমন করে তোরংগ আজ খোলো?

থুতনিপরে তিল তো তোমার আছে
এখন? ও মন নতুন দেশে যাবি?
চিঠি তোমায় হঠাত্‍ লিখতে হলো ।

চাবি তোমার পরম যত্নে কাছে
রেখেছিলাম, আজই সময় হলো -
লিখিও, উহা ফিরত্‍ চাহো কিনা?

অবান্তর স্মৃতির ভিতর আছে
তোমার মুখ অশ্রু-ঝলোমলো
লিখিও, উহা ফিরত্‍ চাহো কি না?

সরোজিনী বুঝেছিলো
দুপুরে আঁধার ঘর-মেঘে ঢাকা বিস্তৃত আকাশ
সরোজিনী চুরি করে নিয়ে যায় সাদা রাজহাঁস
হয়তো বা বৃষ্টি হবে, হয়তো বহিবে হাওয়া বেগে
মুখের অগ্নি কি তবে সরোজিনী ঢেকেছিলো মেঘে?
মাঠের উপরে সাদা হাঁসগুলি চরেছিলো একা
সরোজ ঘরেই ছিলো শুধু তার চোখ মেলে দেখা
এই সব হাঁসেদের বৃষ্টির সূচনা দেখে নেমে
জড়িয়ে গিয়েছে মেয়ে হাঁসে-ফাঁসে-কাপড়ের প্রেমে
শুধু চোখ মেলে দেখা, এই হাঁস স্পর্শ করা নয়
সরোজিনী বুঝেছিলো, শুধু তার বোঝেনি হৃদয়।

দাঁড়াও
মানুষ বড়ো কাঁদছে, তুমি মানুষ হয়ে পাশে দাঁড়াও
মানুষ ফাঁদ পাতছে, তুমি পাখির মতো পাশে দাঁড়াও
মানুষ বড়ো একলা, তুমি তাহার পাশে এসে দাঁড়াও।

তোমাকে সেই সকাল থেকে তোমার মতো মনে পড়ছে
সন্ধে হলে মনে পড়ছে, রাতের বেলায় মনে পড়ছে
মানুষ বড়ো একলা, তুমি তাহার পাশে এসে দাঁড়াও।

এসে দাঁড়াও, ভেসে দাঁড়াও অবং ভালোবেসে দাঁড়াও
মানুষ বড়ো কাঁদছে, তুমি মানুষ হয়ে পাশে দাঁড়াও
মানুষ বড়ো একলা, তুমি তাহার পাশে এসে দাঁড়াও।